দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ কত দূর! by আব্দুল কুদ্দুস

কক্সবাজারের জেলে পার্ক ময়দানে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দলীয় জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, শিগগিরই চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হবে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী ঝিলংজা বিডিআর ক্যাম্প এলাকায় রেললাইন স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও উন্মোচন করেন। তবে এখনো এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি।


১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ তৈরির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়নি। অর্থসংকটের কারণে বিশেষ এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে হতাশ কক্সবাজারের বাসিন্দারা।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সমপ্রসারণ সময়ের দাবি। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প ২০১০ সালে একনেকের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। কিন্তু দাতা সংস্থার অর্থসহায়তা না পাওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে না। পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন সরকারের বরাদ্দে হলেও এই প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, অর্থের অভাবে প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে না। অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে প্রায় দেড় হাজার একর ভূমিতে জরিপকাজ হয়েছে। সরকারের মেয়াদকালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
১২৮ কিলোমিটারের রেলপথ প্রকল্প: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ১২৮ কিলোমিটারের মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব হবে ৮৯ কিলোমিটার। রামু থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত অতিরিক্ত আরও ১১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে। আবার রামু থেকে দক্ষিণ দিকে মিয়ানমার সীমান্তে উখিয়ার ঘুমধুম পর্যন্ত আরও ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে। রেলপথে থাকবে নয়টি স্টেশন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়ায় এসব স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৪৭টি সেতু, ১৪৯টি বক্সকালভার্ট ও ৫২টি পাইপ কালভার্ট থাকবে এই রেলপথে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমার ও চীনসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ তৈরি হবে। খুলে যাবে পুবের জানালা।
অর্থসংকট, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত সরকার জমি অধিগ্রহণ কাজের বিপরীতে দুই দফায় মাত্র ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। টাকার অভাবে প্রায় দেড় হাজার একর জমিও অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা থেকেও এর সত্যতা মেলে। গত ১৫ মার্চ রাজধানীর রেলভবনে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। এ জন্য সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছে, ভূমি অধিগ্রহণে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, প্রস্তাবিত রেলপথ হবে মিটারগেজ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪৫ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে এডিবি দেবে ৩৫ কোটি ডলার। বাকি টাকা সরকার জোগান দেবে। রেললাইন বাস্তবায়ন করা হলে এই রুটে বছরে সাড়ে ১০ লাখ যাত্রী চলাচল করার সুযোগ পাবে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অর্থের অভাবে প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। দাতা সংস্থা প্রতিশ্রুতি দিলেও টাকা দেয়নি। এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি দাতাও খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পের কাজ থেমে থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে জেলার মানুষের মধ্যে। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল জানান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সৈকতের পাশের খাসজমি দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা দিয়ে অথবা বিক্রি করে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এই টাকায় হতে পারে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, ‘যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দলই রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয় না। এখনো আমরা সেই পথে হাঁটছি। সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য প্রথম দফায় ৩০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু রেলপথ নির্মাণের জন্য নাকি টাকা নেই। আগামী জাতীয় বাজেটে এই খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হোক, এটাই কক্সবাজারবাসীর দাবি।’

No comments

Powered by Blogger.