ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল-মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা by রফিকুল ইসলাম

বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এ দেশের বিভিন্ন জরুরি সমস্যা ও নির্বাচিত তিনটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ নৌ-দুর্ঘটনার বিষয়ে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক সাঈদ চৌধুরীর দেশীয় বাস্তবতা ও সমাধানমূলক নির্দেশনা এবং রফিকুল ইসলাম-এর মালয়েশিয়ার নৌপথ-ব্যবস্থাপনা দেখার অভিজ্ঞতার লেখা ছাপা হলো।


মালয়েশিয়ার কুয়ালা পারলিস ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে করে গিয়েছিলাম লাংকাউই। নৌপথে সে দেশের উন্নত ব্যবস্থা দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। কত আধুনিক, কত বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা নৌপথেও থাকতে পারে! সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা, তারপর আর কোনো ফেরি বা লঞ্চ নৌপথে চলাচল করে না। এই নিয়ম মালয়েশিয়ায় একটি শক্তিশালী কার্যকর আইন বলা যায়। কোনো নৌযান সেই আইন লঙ্ঘন করে না। টিকিট কিনে লঞ্চে ওঠার আগে একটি রেজিস্ট্রেশন খাতায় আমার নাম-ঠিকানা লিখে দিলাম। লঞ্চে ওঠার আগে নিজের নাম-ঠিকানা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর কারণ, যদি কোনো রকমের দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে কে কে এই লঞ্চটিতে ছিল, তা সহজেই জানা যাবে—অনেকটা বিমানের মতো। স্থানীয় মুদ্রা ১৮ রিঙ্গিত দিয়ে যে টিকিটটি কিনেছিলাম, তার সঙ্গে সাত রিঙ্গিতের একটি জীবনবিমা করা ছিল। যদি কোনো রকমের দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ বহন করবে। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার ও জাহাজ মজুদ থাকে সব সময়। যদিও দেশটিতে নৌ-দুর্ঘটনা নেই বললেই চলে। মোট আসনসংখ্যার অতিরিক্ত একজন যাত্রীও বহন করতে দেখিনি। লঞ্চের ভেতরের পরিবেশ দেখেও মুগ্ধ হয়েছি। কী ঝকঝকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যাত্রীদের বসার আসনগুলো ঠিক উড়োজাহাজের আসনের মতো। প্রত্যেক যাত্রীর জন্যই লাইফ জ্যাকেট সংরক্ষিত আছে। দুর্ঘটনা ঘটলে কী করতে হবে, তা লঞ্চটি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিভির পর্দায় সবাইকে দেখানো হলো। যে লঞ্চটিতে করে গিয়েছিলাম, তার নির্মাণশৈলী দেখে বোঝা গেল ভেতরে পানি ঢোকার কোনো উপায় নেই। নীল সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে লঞ্চটি গেলেও আমার একটুও ভয় লাগেনি। সার্বিক ব্যবস্থাপনাই এই নির্ভয় জুগিয়েছে। সমুদ্রপথে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল। তা ছাড়া চালকের জন্য সুন্দরভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। চালকের দক্ষতার বিষয়ে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। লঞ্চে কর্তব্যরত প্রত্যেক কর্মচারী যাত্রীদের প্রতি আন্তরিক, যেন আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য। লাংকাউই ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর আবার গণনা করা হলো সবাই ঠিকমতো এসেছে কি না, তা জানার জন্য। এই ভ্রমণে বুঝতে পেরেছিলাম, কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে কতটা সচেতন। তাই আমাদের মাননীয় নৌমন্ত্রী মহোদয়, আপনাকে বিনীতভাবে বলতে ইচ্ছা করে, আমাদের দেশ কি পারে না এভাবে নৌপথ পরিচালনা করতে? চেয়ার থেকে উঠে একটু ঝেড়ে দাঁড়ান, দেশের মানুষের জীবনরক্ষায় একটু ইচ্ছা পোষণ করুন না! সৎ মন নিয়ে সৎ উদ্যোগ নিলে আমরা দেশবাসী কত আন্তরিক, সেটার প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
 রফিকুল ইসলাম, ri.sagar2@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.