দেশে ৩০১২ জনের জন্য চিকিৎসক মাত্র একজন



স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক বলেছেন, ‘‘দেশে তিন হাজার ১২ জনের জন্য বর্তমানে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। আর ২ হাজার ৬৬৫ জনের জন্য রয়েছে একটি শয্যা। রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৬ হাজার ৩৪২ জনের জন্য রয়েছেন একজন নার্স। এছাড়া চিকিৎসকের সঙ্গে নার্সের অনুপাতও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তঃ ও বিভাগীয় সমন্বয় জোরদার করা হবে। আর নার্সিং সেক্টরের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।’’


বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আগামী ৭ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিদস পালন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

‘প্রবীণদের যত্ন নিন: স্বাস্থ্য রক্ষায় এগিয়ে আসুন’ শ্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ৭ এপ্রিল শনিবার বিশ্বস্বাস্থ্য বিদস পালন করা হচ্ছে।

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় যত্ন নিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আহবান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক বলেন, ‘‘দেশের শহর ও গ্রাম সব পর্যায়েই প্রবীণদের স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। বার্ধক্যজনিত ও প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুযোগ বঞ্চিত।’’  

স্বাস্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, বর্তমানে দেশে ষাটোর্ধ প্রবীণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ছয় দশমিক আট শতাংশ। সারা বিশ্বে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ প্রবীণ।  

আগামী চার দশকে বিশ্বে ষাট ও তারও বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ধারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক বলেন, ‘‘বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা ৮০ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০ কোটি হতে পারে।’’

তিনি জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশসমূহে ৬০ বছরের অধিক বয়সের জনসংখ্যা ৮ শতাংশের বেশি। আগামী ২০২৫ সালের বেড়ে দাঁড়াবে ১২ শতাংশ। আর উন্নত দেশে প্রবীণদের সংখ্যা বেড়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি হবে।

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি কল্পে ২০১১ থেকে ২০১৬ মেয়াদী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হতে নিয়েছে। এর আওতায় প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকায় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়নে কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার। কর্মসূচির আওতায় জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা হবে। এর বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’’

অনলাইন চিকিৎসা

সরকার দেশে অনলাইন চিকিৎসা ব্যবস্থা ও টেলিমেডিসিন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রক্রিয়ায় যে কোনো সাধারণ রোগী তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পেতে একটি চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জমাদি সরবরাহ ছাড়াও ছয় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে কমিউনিটি পর্যায়ে সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার নিয়োগ করা হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল

দেশে সরকারি পর্যায়ে ৫৮৩টি ও বেসরকারি পর্যায়ে দুই হাজার ৫০১টিসহ মোট ৩ হাজার ৮৪টি হাসপাতাল রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৩৯টি, যা সাত বছর আগে ছিলো ৩২ হাজার ৮৬০টি। বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৪২ হাজার ২৩৭টি, যা সাত বছর আগে ছিলো ১২ হাজার ৩২৮টি।

দেশে বর্তমানে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ২২টি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৫৩টি। জেলা পর্যায়ে সদর হাসপাতাল ৬২, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪১৮ এবং ইউনিয়ন সাব সেন্টার ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫ হাজার ১৬৮টি। 

সেবার মান

উন্নয়নশীল দেশে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে জনগণের কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। দেশে স্বাস্থ্যখাতে মোট জিডিপির তিন দশমিক এক শতাংশ ব্যয় হয়, যা উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম।

প্রবীণ নিবাস

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ঢাকার আগারগঁও-এ একটি প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিচালতি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ৫২টি প্রবীণ নিবাস রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি উদ্যোগেও কয়েকটি প্রবীণ নিবাস পরিচালিত হচ্ছে। এখানে প্রবীণদের পুনর্বাসনসহ স্বাস্থ্য পরিচর্যারও ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবীণরা যেন সমাজের বোঝা না হয় প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

প্রবীণদের জন্য করণীয়

প্রবীণদের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি, পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা, হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি, পেনশন প্রাপ্তিতে সহায়তা, বয়স্কভাতা প্রদান ও বৃদ্ধি করা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া প্রবীণদের পরিবার ও সমাজে সক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সবাইকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

কেবল স্বাস্থ্যবিভাগ নয় স্বাস্থ্য রক্ষায় সসব সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক পৌরকর্মী, বেসরকারী সংস্থা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী- বেসরকারী কর্মকর্তা ও কর্মী সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

No comments

Powered by Blogger.