ডিসিসি নির্বাচন-বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা নির্ভর করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর। দলটি নির্বাচন পুরোপুরি বর্জন করলে উদ্বেগ-উত্তেজনা শুধু সরকারি দলের প্রার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে উদ্বেগ-উত্তেজনা বহুগুণে বাড়বে। সরকারি দলও তখন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সমস্যায় পড়বে।


গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা এসব কথা বলে জানিয়ে দিলেন, আসন্ন ডিসিসি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা আগাম বলা সম্ভব নয়। স্পর্শকাতর এ নির্বাচনে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে আরো জানানো হয়, নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো ধারণা নেই। তবে মধ্যমসারির কিছু নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এই মতামতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, বৈঠকে আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড ও দেয়াল লিখন এবং এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা নিয়েই আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচন কমিশন এসব অপসারণের জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসককে চিঠি দেবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড নিজ দায়িত্বে সরিয়ে ফেলতে হবে। তফসিল ঘোষণার পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব সরিয়ে বা মুছে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন ও ইসির লোকবল নামবে, খরচও বাড়বে। ওই সময়ের মধ্যে না সরালে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবেন, খরচের দায়ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের নিতে হবে।'
সিইসির সভাপতিত্বে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ ও ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিকসহ কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংস্থাগুলোর পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন, আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. জাহিদুর রহমান, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল কে এম হোসেন, অতিরিক্তি আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ, ঢাকার জেলা প্রশাসক মুহিবুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ এবং ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকালের বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড-বিষয়ক আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, এসব অপসারণের জন্য ডিএমপির প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থের সংস্থান নেই।
বৈঠকে সেনাবাহিনী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সেনাবাহিনী নিয়োগ না করেই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসন্ন ডিসিসি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রচুর গাড়ি প্রয়োজন। কিন্তু আদালতের নির্দেশের কারণে এখন গাড়ি রিকুইজিশন করা যাচ্ছে না। এ সমস্যার একটি সমাধানে পৌঁছতে ইসিকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়।
ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ইসির প্রস্তাব অনুসারে মাত্র ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব হবে না। ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরো বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
এদিকে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন নির্বাচন উপযোগী কি না এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার কাছে কী পরিস্থিতির কথা জানলেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সিইসি বলেন, 'আমরা আরো বৈঠক করব। একাধিক পর্যায়ে বৈঠক হবে। যথাসময়ে সব কিছু জানতে পারবেন।'

No comments

Powered by Blogger.