ছাত্রলীগের জন্য ৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব by নির্ঝর আলম সাম্য

আগামী ১০ জুলাই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন এবং ১১ জুলাই নতুন নেতৃত্বের জন্য ভোটগ্রহণ। তাই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, শোডাউন, লবিং, তদবির লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বয়সের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে শঙ্কাও কম নয়।


গঠনতন্ত্রে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বয়সসীমা ২৭ বছর। তথাপিও গত সম্মেলনে ২ বছর বৃদ্ধি করে ২৯ বছর করা হয়েছিল। তাই এবারও ২৯ বছর পার হয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতারা বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী এবং লবিং করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে যাদের বয়সসীমা ২৯ বছরের মধ্যে আছে তারা চক্ষুলজ্জার কারণে সিনিয়রদের কিছু বলতে না পারলেও তাদের মনের প্রকৃত চাওয়া_ বয়স যেন বৃদ্ধি করা না হয়। এই পরিস্থিতিতে সামনে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নিম্নে উলিল্গখিত ৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে ছাত্রলীগ ভবিষ্যতে আলোর পথ দেখবে বলেই আমার বিশ্বাস।
কেন্দ্রীয় কমিটি এবং শাখা কমিটির নেতাদের বয়স আনুপাতিক হারে নির্ধারণ।
প্রতিযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বিবেচনা করে নেতৃত্ব নির্বাচনের শর্ত আরোপ।
নেতৃত্ব আত্মপ্রকাশের জন্য সময় ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দান।
নূ্যনতম সাংগঠনিক যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বনের চেয়ে গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন।
সংগঠনে অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
সময়ের প্রয়োজনে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। অতঃপর সময়কে এগিয়ে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ। আজ আবার সময়ের প্রয়োজনেই ছাত্রলীগের কিছু সংস্কার জরুরি। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে শাখা কমিটির নেতাদের কোনো প্রকার মনস্তাত্তি্বক দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিত্বের সংঘাত কাম্য নয়। এ সংঘাত এড়াতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে শাখা কমিটির নেতাদের বয়সের পার্থক্য থাকা আবশ্যক।
ছাত্রলীগের আদর্শভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রাম সবসময় অন্য ছাত্র সংগঠনের আদর্শের সঙ্গে মিলবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বরং স্বার্থান্বেষী অনেক সংগঠন বিরোধিতাও করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে অন্যদের চক্রান্ত মোকাবেলা করে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রয়োজনে একাই এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নির্বাচন করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটি ও শাখা কমিটিগুলোর কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে। কাউন্সিলরদের ভোটার সংখ্যার সিংহভাগ আসে শাখা কমিটি থেকে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে শাখা কমিটির কাউন্সিলরদের কাছে অধিকাংশ প্রতিযোগী অপরিচিত। কারণ কেন্দ্রীয় কমিটির যেসব নেতার সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক প্রোগ্রাম ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শাখা কমিটির নেতাদের সাংগঠনিক পরিচয় ঘটে, তারা বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশব্যাপী শাখা কমিটির নেতাদের সঙ্গে এই পরিচয়ের সুযোগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদেরই বেশি থাকে। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নেতৃত্ব গুণ দেশব্যাপী আত্মপ্রকাশ পায়।
যখন কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে না, শাখা কমিটির কাউন্সিলররা তখন বাধ্য হয়ে অন্য কারও কথায় প্রভাবিত হয়ে অপরিচিত একজনকে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় প্রকৃতপক্ষে কাউন্সিলরদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে দেশব্যাপী পরিচিত নেতাদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা আবশ্যক।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করতে হলে যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বের প্রয়োজন। আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে এবং তাদের সুচিন্তিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়া সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে এ শুভকামনা থাকল।
হ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.