মেরিটাইম প্রশিক্ষণ by মঞ্জুরুল হক

বাংলাদেশ মেরিটাইম জাতি হিসেবে বিশ্বে সুনাম অর্জন করলেও সাগরে চলাচলরত সমুদ্রগামী জাহাজে দক্ষ নাবিক ও অফিসার দিতে দিন দিন ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। জাহাজ পরিচালনার জন্য দক্ষ নাবিক ও অফিসার তৈরির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে ব্যাপক অনিয়ম।


বর্তমানে অফিসার তৈরির জন্য মেরিন একাডেমী ও নাবিক তৈরির জন্য ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট রয়েছে। ডিমান্ড ও সাপ্লাই এ ফর্মুলার ধার না ধেরে মেরিন একাডেমী বর্তমানে ক্যাডেট ধারণ ক্ষমতা করেছে ৫০০ জন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর জন্য একজন প্রশিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ৮০-৯০ জনের জন্য রয়েছে একজন প্রশিক্ষক। রেগুলেটরি বডি হিসেবে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর আদৌ কিছু করছে কি? সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর ইতিমধ্যে ৯টি বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দিয়েছে। হাতেগোনা দু'একটি ইনস্টিটিউট ছাড়া সবাই একটি-দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। কোনোটিতেই স্থায়ী প্রশিক্ষক নেই। জাহাজি অফিসার ইঞ্জিনিয়াররা তাদের চাকরির ফাঁকে ফাঁকে ক্লাস নিয়ে সময় কাটান। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে মেরিটাইম ট্রেনিং বিষয়ক সব কোর্সের অগ্রিম অনুমোদন তারা নিয়ে নিয়েছে। ক্লাস না করেও সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি ঘটনার তদন্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়ার পর অনুমোদন বাতিল প্রক্রিয়াও স্থগিত হয়ে আছে। প্রতি প্রশিক্ষণার্র্থীর কাছ থেকে অনেক টাকা নেওয়া হয়। বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে চলে প্রতারণা। দুটি প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন কোর্সের কোনো প্রশিক্ষণ না দিয়ে শ'খানেক সার্টিফিকেট বিক্রি করে দিয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর কর্মকর্তাদের এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড মনিটর করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশে শিপ ব্রেকিং ও শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে সাফল্য এলেও সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য নাবিক অফিসার তৈরিতে মার খাচ্ছে এবং এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি জাহাজ মালিকরা দেখতেও পাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ সেল (অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক) সবচেয়ে অস্বচ্ছ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। স্মরণ রাখতে হবে, ২০১৪ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইএমও) অডিট টিম যদি সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরকে স্বচ্ছ হিসেবে দেখতে না পায় এর দায়দায়িত্ব সরকার নেবে এবং বাংলাদেশ আইএমওর এ কালো তালিকাভুক্ত হবে।

স মঞ্জুরুল হক :(বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীর ষষ্ঠ ব্যাচ) চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওয়ালহেন শিপিং লাইন, হংকং

No comments

Powered by Blogger.