বিশ্বশান্তি বিপন্ন করবে ইসরাইলঃ গুন্টার গ্রাস

জার্মানির সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকটিসহ ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দৈনিকে বুধবার প্রকাশিত এক কবিতায় গুন্টার গ্রাস লিখেছেন ইরান নয় বরং ‘ভঙ্গুর’ বিশ্বশান্তি আরো ‘বিপন্ন’ করবে পারমানবিক শক্তিধর ইসরাইল । ৮৪ বছর বয়সে এসে জার্মানিতে জীবিত সাহিত্যিকদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রাস সতর্ক করে দেন যে, ইসরাইল প্রথম হামলা চালিয়ে ইরানের জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে।
নোবেলজয়ী এ সাহিত্যিক তার দেশের কাছে দাবি করছেন, ইসরাইলকে যেন আর কোনো পারমানবিক ডুবোজাহাজ- জার্মান ইউবোট না দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, জার্মানি বেশ কিছুকাল থেকে ইসরাইলকে নিজেদের ইউ-বোট খ্যাত ডুবোজাহাজ সরবরাহ করছে। যে সব ডুবোজাহাজ পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত করা সম্ভব। ইসরাইল যে ইরানকে আক্রমণ করতে যাচ্ছে, সে বিষয়টিকে ‘পূর্বাভাসযোগ্য অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে গ্রাস বলছেন জার্মান সরকারকে এ সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে।

তার কবিতার শিরোনাম ‘যে কথা বলতেই হবে’। কবিতাটি একইসঙ্গে সর্বাধিক প্রচারিত জার্মান দৈনিক জাইটডাটশে অটসেইটান Süddeutsche Zeitung ও অন্যান্য ইউরোপীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

কবিতায় তিনি বলেন, জার্মানি অতীতে ইহুদীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছিল সেই অভিজ্ঞতার কারণে তিনি এতদিন এ বিষয়ে বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তিনি এও বলেন যে তিনি জানেন এ কবিতা প্রকাশিত হবার পর তাকে অতি পরিচিত কৌশল হিসেবে ‘ইহুদী বিদ্বেষী’ আখ্যা দেয়া হবে। তবুও তিনি না লিখে পারেননি।

কারণ, তিনি মনে করেন ইসরাইল প্রথমেই আক্রমণ করে ‘ইরানি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে’। কবিতায় ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে তিনি ‘বেহুদা বাচাল লোক’ বলে আখ্যা দেন।

দীর্ঘ কবিতাটির শেষের দিকটা বাংলায় এমন দাঁড়ায়:

যে কথা বলতেই হবে

ভঙ্গুর বিশ্বশান্তিকে আরো বিপন্ন করছে
পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত ইসরাইল,
এসব কথা আমি এখন কেন বলছি,
এই বার্ধক্যে এবং কলমের শেষ কালিতে?
কারণ এ কথা বলতেই হবে,
আগামীকালের অপেক্ষা অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে,
(বলতেই হবে) কারণ আমরা- জার্মানরা পূর্বাভাসযোগ্য
এক অপরাধে অনেক সহায়তা দিয়েছি, এ দুষ্কর্মে
সহযোগিতার শাপমোচন হবে না, কোনো সাধারণ অজুহাতেই।

এবং হ্যাঁ, আমি আর চুপ থাকবো না
পশ্চিমের ভন্ডামিতে
আমি ক্লান্ত, এবং আশাবাদীও
অনেকেই নিরবতা ত্যাগ করবে।
আসন্ন বিপদের কারণ প্রতিরোধ করুন,
সহিংসতার নিন্দা করুন, আহ্বান করুন এবং
জোর দিয়ে বলুন,
দুই দেশের সরকার অনুমোদন করবে এমন
আর্ন্তজাতিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইসরাইলের
পরমাণু অস্ত্রের ও ইরানের পারমানবিক কর্মসূচির
বাধাহীন ও স্থায়ী নজরদারি করা হোক।

কবিতাটির ব্যাপারে আজ জার্মান চ্যান্সেলরের মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল সাংবাদিকরা। মুখপাত্র জবাব দিয়েছেন, ‘‘জার্মানিতে শৈল্পিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে এবং সৌভাগ্যজনকভাবে প্রত্যেকটি শিল্পকর্মের ওপর মন্তব্য না করার স্বাধীনতাও সরকারের আছে।’’

অবশ্য ইসরাইলপন্থি লেখক-সমালোচকরা এতটা সদয় নন। জার্মানি থেকে শুরু করে সারা দুনিয়ার ইসরাইলপন্থি ব্যক্তিত্বরা ইতিমধ্যেই তাকে ‘ইহুদী বিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে তুমুল সমালোচনায় জেরবার করে তুলেছেন, যে সমালোচনার আশঙ্কা গুন্টার তার কবিতায় উল্লেখ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.