৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মুক্তি নেই ভোগান্তি থেকে-সরকারি সেবানির্ভর বেশির ভাগ মানুষ by প্রণব বল

চট্টগ্রামে বছরে প্রায় সাড়ে আট লাখ লোক সরকারি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন আরও অন্তত ৫০ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু। বেশির ভাগ মানুষের নির্ভরতা এখনো সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলেও নিত্যদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবার অভিযোগ সবসময়ই পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এক হাজার ১০ শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। সে হিসাবে বছরে সাত লাখের বেশি রোগী এখানকার অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন আরও অন্তত ৩০ লাখ রোগী।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগরের অপর একটি সরকারি চিকিৎসালয় জেনারেল হাসপাতাল সম্প্রতি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এখানে প্রায় ২৫ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া অনেক রোগী বহির্বিভাগেও চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন প্রতিদিন।
জেনারেল হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ২০১১ সালে ৯৬ হাজার ৭১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৬৬৯ জন। একই সময়ে এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে ২০ লাখ ৮১ হাজার ১২১ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের ভোগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, সেবিকাদের অযত্ন, সরকারি ওষুধ না দেওয়ার অভিযোগ প্রভৃতি। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতাল বিশেষ করে চমেক হাসপাতালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ অপরিচ্ছন্নতা। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা হাসপাতাল কিংবা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের প্রতি কোনো অবহেলা হয় না। উপজেলা হাসপাতালে মাঝেমধ্যে চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। তবে সেটা আগের চেয়ে কমে এসেছে। এ জন্য আমরা অনেক চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করেছি।’ সরকারি এসব হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকেও চিকিৎসা নিয়ে থাকেন রোগীরা।
প্রসূতিসেবা: চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গত এক বছরে প্রসবকালে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ২৯০টি মৃত বাচ্চার জন্ম হয়েছে। তবে পাঁচটি নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রসূতিসেবা নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার নারী।
২০১১ সালে চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১২ হাজার ৪৬টি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে যথাক্রমে চার হাজার ৯৯৮ ও ছয় হাজার ৯৭৮ নবজাতকের জন্ম হয়েছে।
ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি: ২০১১ সালে বিভিন্ন উপজেলা ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এক হাজার ৪১৫ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের বছর ম্যালেরিয়া রোগী ছিল এক হাজার ৬৪৪ জন। ২০০৯ সালে রোগী ছিল তিন হাজার ২৩৩ জন।
ডায়রিয়া পরিস্থিতি: ২০১১ সালে বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৪০ হাজার ১২৫ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা গেছে এপ্রিল, মে, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে। এপ্রিল মাসে মোট রোগী ছিল চার হাজার ৬৯ জন, মে মাসে চার হাজার ২৮০ জন, নভেম্বর মাসে চার হাজার ২৪ ও ডিসেম্বরে চার হাজার ১৮৯ জন।

No comments

Powered by Blogger.