রাজনৈতিক দৃশ্যপট-সংঘাতে কারও কল্যাণ নেই

বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বুধবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গৃহীত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। যেমন, সামরিক শাসনামলে কোনো আলোচনা ছাড়াই বাতিল করে দেওয়া রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতি প্রায় তিন যুগ পর পুনর্বহাল। রাষ্ট্রধর্ম প্রশ্নে সরকার একটি আপসমূলক ফর্মুলা বেছে নিয়েছে।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সংবিধানে এ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বুধবার সংবিধান থেকে এ সংক্রান্ত ধারা বাতিল হওয়ায় বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, দেশে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এ ব্যবস্থা পুনর্বহালে রাজপথের কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন। এ ইস্যুতে বিএনপি এবং তাদের কয়েকটি মিত্র দল ১২-১৩ জুন ৩৬ ঘণ্টা টানা হরতাল পালন করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে হরতাল-অবরোধের নতুন কোনো কর্মসূচি প্রদান করা না হলেও এ পথের বিকল্প তারা ভাবছে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে কয়েকটি ধর্মান্ধ দল সংবিধান সংশোধনের প্রতিবাদে ১০ জুলাই থেকে ৩০ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে। তাছাড়া আগামীকাল রোববার রয়েছে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির রাজধানীতে ৬ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি। জনসাধারণকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানানোর অধিকার যে কারও রয়েছে। সরকারের সঙ্গে কোনো দল বা জোটের অবস্থান মুখোমুখি পর্যায়ে পেঁৗছালে কিংবা পয়েন্ট অব নো রিটার্নের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কর্মসূচির ধরন কঠোর হয়ে থাকে। তবে এটাও ঠিক যে, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি অনেক বছর ধরেই কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে জনমতের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। গণমাধ্যমের খবর এবং বিভিন্নভাবে প্রকাশিত জনমতে বরং এ ধারণাই মেলে যে, এ ধরনের কর্মসূচিকে কর্মনাশা ও আমজনতার জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান সংশোধনসহ অন্যান্য ইস্যুর নিষ্পত্তির জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করতে গিয়ে এ বাস্তবতা বিবেচনায় রাখবে, এটাই কাম্য। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের রেওয়াজ চালু হয়েছে। জনসাধারণ নির্বাচনে তাদের মতামত ব্যক্ত করছে। সাধারণ নির্বাচন এখনও আড়াই বছর দূরে। এ অবস্থায় সব দলই জনমত পক্ষে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে পাবে। বৃহস্পতিবার সংবিধান সংশোধিত হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর বহাল নেই। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে বর্তমান সরকার দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন ধারণা দিয়েছেন যে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ যে কোনো ফর্মুলা নিয়ে সংসদে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ খোলা রয়েছে। তার এ অভিমতের প্রতি বিএনপি এবং তার মিত্ররা যাতে আস্থা রাখতে পারে সে জন্য সরকারের তরফে আরও কিছু ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যেতে পারে। এটা সবারই বুঝতে হবে যে, সংঘাতে কিন্তু দেশ ও দশের কল্যাণ নেই। সরকার ও বিরোধী সব পক্ষেরই উচিত হবে এ পথ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বতোভাবে তৎপর হওয়া।
 

No comments

Powered by Blogger.