আ.লীগের নেতারাও আতঙ্কিত-দায় এড়াতে পারে না সরকার

বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সরকার ও আওয়ামী লীগ দায় এড়াতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। এ কথা বলেছেন সরকারি দলের নেতারাও। বেশ কয়েকজন নেতা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।


তাঁরা বলেন, কখন কী হয়, এমন অজানা আশঙ্কায় তাঁদের মধ্যে একধরনের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিরোধী দলের মতো তাঁদের নেতাদেরও সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগ ও সরকারের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় তাঁরা এ ধরনের ঘটনা রাজনীতিতে খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করছেন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীরা প্রথম আলোর সঙ্গে নানা কথা বললেও প্রকাশ্যে তাঁরা কিছু বলতে চাইছেন না। এ ঘটনায় তাঁরা বিব্রত বলেও মন্তব্য করেন। কয়েকজন মন্ত্রী মনে করেন, সরকারকে সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে। ইলিয়াস কেন, কীভাবে নিখোঁজ হলেন, তা প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এ রকম ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। মুখে যা-ই বলা হোক, এটা একটা অশুভসংকেত।
মন্ত্রীদের কেউ কেউ মনে করেন, এ ঘটনা সরকারের পক্ষ থেকে ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এটা সরকারের জন্যই আত্মঘাতী। গায়ে পড়ে কেউ বিপদ ডেকে আনতে চায় না। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এ ঘটনা সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেন।
সরকারে নেই আওয়ামী লীগের এমন একজন জ্যেষ্ঠ নেতার মতে, সরকার এটা করেছে, তা মনে হয় না। তবে কারা এ ঘটনায় জড়িত, তা সরকারকেই বের করতে হবে। তাঁর মতে, সরকারের কোনো অংশ এটা করে থাকলেও তা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই সহায়তা করবে। অপর একজন নেতার মতে, ইলিয়াসের অতীত ভালো নয়। কিন্তু এ ঘটনায় এখন তিনি নায়ক বনে গেছেন।
এদিকে ইলিয়াসের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। কেউ কেউ এ ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন। কারণ, গুমের ঘটনা আগেও দেশে হয়েছে। এটাই প্রথম নয়। তবে এ রকম ঘটনা চলতে দেওয়া যায় না। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করছে। বিরোধী দল এ ঘটনায় সরকারকে দায়ী করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তারা এ ধরনের ঘটনায় অভ্যস্ত বলেই এমন অভিযোগ করছে।
আওয়ামী লীগের বৈঠক: গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে ঢাকায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতা ও মহানগরের দলীয় সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
জানা যায়, বৈঠকে সৈয়দ আশরাফ দলীয় নেতা ও সাংসদদের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন। বৈঠকে নেতাদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা ছাড়া, আজকের হরতালে দলীয় নেতা ও সাংসদদের নজরদারি ও পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। হরতালে বাধা দেওয়ার কথা না বলা হলেও নেতা-কর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার প্রস্তুতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

No comments

Powered by Blogger.