বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ধর্মঘট-শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে শিক্ষকদের একাংশের ধর্মঘটের কারণে। শুক্রবার সমকালে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয় : উভয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, 'উপাচার্য অনিয়ম ও দুর্নীতিতে' জড়িত।


এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই কাগজে-কলমে স্বায়ত্তশাসিত। কিন্তু বাস্তবে উপাচার্য নিয়োগসহ অনেক গুরুত্বপূূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সরকারি পর্যায়ে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকায় থাকতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য সিনেটে তিনজনের প্যানেল নির্বাচনের বিধান থাকলেও কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অনুসরণ করা হয় না। ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায়ের আস্থাভাজন কাউকে এ পদে বসিয়ে দেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তন হলেও এ রেওয়াজে পরিবর্তন নেই। আলোচ্য দুটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে। লক্ষণীয়, আন্দোলনরত শিক্ষকদের সারিতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরাও রয়েছেন। এর একটি কারণ হতে পারে যে, অভিযোগ এতই গুরুতর যে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষকরা 'উপাচার্যবিরোধী' আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। অন্য কারণ হতে পারে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শিক্ষকদের একটি অংশ ক্ষমতা কেন্দ্রের আনুগত্য লাভে সচেষ্ট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে তৎপর। কারণ যাই হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকরা ধর্মঘট করায় 'সেশনজটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে'। এটা অমূলক হবে_ এমন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। বুয়েটকে বলা হয় মেধাবীদের মধ্যেও মেধাবীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন একটি প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন শিক্ষকদের ধর্মঘটের কারণে অচল থাকা দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের পরও অচলাবস্থার নিরসন করা সম্ভব হয়নি। জাহাঙ্গীরনগরেও অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। তাহলে শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ভার কোন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে? সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কাজের জন্য বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। মহাজোট সরকারের তৃতীয় বছর পূর্তি উপলক্ষে সমকালসহ বিভিন্ন দৈনিকের জনমত জরিপে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সব মহলের আস্থাভাজন। এ অবস্থায় দেশের প্রধান দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান কেন অসম্ভব হবে? উপাচার্যরা কেমনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের প্রতি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের কতটা আস্থা রয়েছে_ এসব বিষয় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অজানা থাকার কথা নয়। তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার, সেখানে প্রকৃত বিশ্বমানের জ্ঞানচর্চার পরিবেশ বজায় রাখতে তারা কতটা সক্ষম, সে বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব, দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এগিয়ে আসবে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক বিবেচনায় নিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থকে। তাদের কাছে শিক্ষকের জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদার আসন। দাবি আদায়ে বিকল্প পথের সন্ধান কেন করছেন না, কেন প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত করে ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন_ এ প্রশ্ন উঠছে এবং এর জবাব কিন্তু শিক্ষকদেরই দিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায় এড়ানোর উপায় নেই। কারণ উপাচার্য নিয়োগ ও অপসারণের ভার যে তারাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.