সোর্স চক্করে চট্টগ্রাম র‌্যাব! by এস এম রানা

সোর্সের ফাঁদে পা দিয়ে 'ডাকাতি' ও 'ইয়াবা' নাটকে জড়িয়ে যাওয়ায় র‌্যাবের সোর্স নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এলিট ফোর্স হিসেবে এই বাহিনীর সোর্সরা যাচাই-বাছাইকৃত ও নির্ভরযোগ্য হবে- এমনটাই আশা করেন লোকজন। কিন্তু বেশ কয়েকটি ঘটনায় র‌্যাব সোর্সদের কর্মকাণ্ডে 'নির্ভরযোগ্যতার' পরিবর্তে স্বার্থান্বেষী ও হঠকারিতাই প্রকাশ পেয়েছে।


অবশ্য দু-একজন সোর্সের কর্মকাণ্ডকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন র‌্যাব-৭-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জিয়াউল আহসান সরওয়ার। তিনি বলেন, 'সোর্সদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শুক্রবারের বিষয়টি ছিল একটু ভিন্ন। ইয়াবা ট্যাবলেটের অভিযান হওয়ায় অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা ডিএডি হায়দার সোর্সকে অবিশ্বাস করেননি। এরপরও ডিএডি হায়দার সোর্স এবাদুরের শরীর তল্লাশি করে গাড়িতে তুলেছিলেন।' তিনি বলেন, 'র‌্যাবকে ভুল তথ্য দিয়ে সোর্সরা ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবে, এটা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। তাই সোর্সদের বিষয়ে র‌্যাব আরো সতর্কভাবে কাজ করবে।' তিনি র‌্যাব-৭-এর সোর্সের সংখ্যা এবং সোর্স মানি বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
গত বছরের ৪ নভেম্বর র‌্যাব-৭-এর সোর্স মোহাম্মদ দিদারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আনোয়ারা উপজেলার তালসরা দরবার শরীফে অভিযান চালিয়েছিল র‌্যাব। এই অভিযানে দুই কোটি সাত হাজার টাকা লুটের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদারসহ ১২ জন। এই ঘটনায় আনোয়ারা থানায় মামলা হয়েছে এবং কয়েকজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর গত শুক্রবার সকালে নগরীর লাভ লেনের আবেদীন কলোনির একটি তিনতলা বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়িটির ভেতর ইয়াবা রেখে বাড়ির লোকজনকে র‌্যাবের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায় সোর্স এবাদুর রহমান ও আইয়ুব আলী। এ সময় এবাদুর ধরা পড়লেও বোরকা পরিহিত আইয়ুব পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই দুই ঘটনার পর র‌্যাবের সোর্সদের কর্মকাণ্ড নিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব পরিচয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে র‌্যাব নিজেই গত বৃহস্পতিবার তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।
অতীতে র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত সোর্সরা র‌্যাবকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময় সোর্সের তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। র‌্যাবের তালিকাভুক্ত কিছু সোর্সকে মাসিক ভাতাও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও সোর্সরা নিজেরা লাভবান হওয়ার স্বার্থে র‌্যাবকে ব্যবহারের দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
আইয়ুব বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আইয়ুব র‌্যাবের সোর্স নয়। এবাদুর রহমানই আইয়ুবের সঙ্গে যোগসাজশ করে র‌্যাবকে ভুল তথ্য দিয়েছিল।' তিনি বলেন, 'আইয়ুবকে ওই পরিবারের লোকজন চিনে ফেলবে এই কথা জানিয়ে সে বোরকা পরে ছিল।' কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়া এবাদুর দাবি করছে, আইয়ুবও র‌্যাবের সোর্স এবং আইয়ুবই তাকে ২০০ পিস ইয়াবা দিয়েছিল। এই কাজের জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তিও হয় তাদের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আইয়ুবকে ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। এ ছাড়া পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে এবাদুরকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এখন এবাদুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'
র‌্যাব সূত্র জানায়, সোর্সদের ব্যক্তিগত স্বার্থে র‌্যাবকে ব্যবহারের চেষ্টার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার র‌্যাব-৭-এর কর্মকর্তা মেজর রাকিবুল আমিন ওই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
র‌্যাব-৭-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর জিয়াউল আহসান বলেন, 'সোর্স ভুল তথ্য দিয়ে র‌্যাবকে ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ওই অসৎ পরিকল্পনার সঙ্গে র‌্যাব জড়িত নয়।' এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমেনা বেগম বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃত আসামি এবাদুর রহমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে, এর সঙ্গে র‌্যাবের কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত নন। তবে অভিযানকালে র‌্যাবের কৌশলগত ভুল হয়েছে।'

No comments

Powered by Blogger.