সিটি করপোরেশনের কানে তালা-ফুটপাত দখল চলছেই by হামিদ উল্লাহ

চেরাগী পাহাড় থেকে ডিসি হিল পর্যন্ত আধা কিলোমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের ফুটপাতটি দখল করতে বাঁশ ব্যবসায়ী, পুরোনো আসবাবপত্র বিক্রেতা, ভ্যানগাড়িচালক আর ফুলের দোকানদারেরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যে যার মতো করে ফুটপাত দখল করে ব্যবহার করছে।


তাদের উৎপাতে এখন পথচারীরা হাঁটে সড়কের ওপর দিয়ে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন অনেকবার অভিযোগও করেছে সিটি করপোরেশনে। কিন্তু তারা নিশ্চুপ।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কানে তালা দিয়ে আছে সিটি করপোরেশন। দখলদারদের সরাতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
অবশ্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিতই ওই ফুটপাত পরিষ্কার করি। কিন্তু উচ্ছেদের পরক্ষণে আবারও কিছু লোক তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে যায়। ফলে ফুটপাত আর স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত থাকে না। এবার আমরা তাঁদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেব।’
গত বৃহস্পতিবার ওই ফুটপাত দিয়ে বৌদ্ধমন্দির মোড় থেকে চেরাগী পাহাড়ের দিকে আসার সময় দেখা যায়, রিকশা মেরামতের দোকান, পুরোনো আসবাবপত্র বিক্রির হাট, সারি সারি বাঁশের স্তূপ দিয়ে বেশির ভাগ অংশ দখল করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ নার্সারির কাছে রিকশা মেরামতের কারিগর ফুটপাতে রিকশা ঠিক করতে ব্যস্ত।
জায়গা না পেয়ে পথচারীরা হাঁটছে সড়ক দিয়ে। এর কয়েক গজ সামনে দেখা গেল, পুরোনো আসবাবপত্র বিক্রি চলছে ফুটপাতের ওপর। তারপর সারি সারি বাঁশ। বাঁশের পর ভ্যানগাড়ির একটানা সারি। সেখানে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে চালকেরা। পথচারীর দুর্ভোগ নিয়ে তাদেরকোনো ভাবনা নেই। আলী আকবর নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ‘সড়কে রাখার চেয়ে ভ্যানগাড়ি ফুটপাতে রাখলেই ভালো। আর লোকজন তো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে। আমরাও তো হাঁটি।’
এরই মধ্যে খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে আসবাবপত্রের হাট। দুই মাস আগেও এখানে পুরোনো আসবাবপত্র বলতে দুই-একটা চেয়ার কিংবা একটা ড্রেসিং টেবিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশে এসব আসবাবপত্র স্থান করে নিয়েছে। রাতেও তা সরানো হয় না। শুধু ওপর থেকে পর্দা টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
আসবাবপত্র বিক্রেতা মো. আবু হানিফ এই ফুটপাতের আসবাবপত্র ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের নামে ভিজিটিং কার্ডও ছাপিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে সেগুন কাঠ, কড়ই, জামগাছসহ বিভিন্ন কাঠের নতুন-পুরাতন আসবাবপত্র বিক্রি হয়। এসব বিক্রিতে কেউ বাধা দেয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা দিন তো বিক্রি করি না। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বসি। অন্য সময় আসবাবপত্রগুলো কেবল ফুটপাতে রেখে দেওয়া হয়।’
চেরাগী পাহাড়ে আসতেই দেখা গেল ফুলের দোকানের উৎপাত। সড়কের পাশে সারি সারি কার সাজানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আর ফুলের দোকানের সামনে বালতি ভরে রাখা হয়েছে ফুলের আটি, স্তূপ হয়ে আছে গাদা ফুল। আবার হেভেন ফ্লাওয়ার হাউস নামের একটি দোকান লোহার গ্যালারি তৈরি করে তা ফুটপাতে আড়াআড়িভাবে বসিয়ে দিয়েছে। এতে ওই জায়গায় ফুটপাতের তিন-চতুর্থাংশ তাদের দখলে চলে গেছে। গ্যালারির সামনে বালতিতে করে ফুল রেখে চলছে বিকিকিনি।
হেভেন ফ্লাওয়ার হাউসের মালিক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাস্টবিনের আবর্জনা দোকানের সামনে চলে আসে। এ জন্য একটি ছাঁচ বানিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছি।’ এর ফলে ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ দখল হয়ে গেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনারা বললে আমি এটা সরিয়ে ফেলতে পারি।’
উল্লেখ্য, এর আগে মোমিন রোডের ফুটফাত দখল নিয়ে প্রথম আলোর আলোকিত চট্টগ্রামে দুইবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

No comments

Powered by Blogger.