বিএনপির ডাকা হরতাল আজ

সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে সারা দেশে আজ সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। হরতালের সমর্থনে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরাও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ইলিয়াস আলীকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন ও হরতালের হুমকি দিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা।


গত মঙ্গলবার রাতে ইলিয়াস আলী বনানী থেকে নিখোঁজ হন। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে বুধবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানান, নগরীতে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ৭৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে। বিক্ষোভ মিছিলকালে আহত হয়েছেন ৬০০ জনের বেশি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইলিয়াস আলীর ফিরে আসার ব্যাপারে অপপ্রচার চালিয়ে লাভ হবে না। তাঁকে ফিরে পাওয়া না গেলে সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন ও প্রয়োজনে আরো হরতাল দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার কারণেই বিএনপি হরতাল ডেকেছে। সরকার যতই দমন-পীড়ন ও অপপ্রচার চালাক না কেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হবে।' জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতার এ রকম গুম হওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে বিরল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, 'আমরা চাই সুস্থ দেহে ইলিয়াস আলী আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসুন। আল্লাহর মেহেরবানিতে তিনি ফিরে এলে আমরা অবশ্যই খুশি হব এবং হরতাল পালনের কোনো কারণই থাকবে না।'
বি চৌধুরী ও কাদের সিদ্দিকীর সমর্থন : বিএনপির ডাকা হরতাল কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ। দলের প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক বিবৃতিতে এ সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। অন্যদিকে গতকাল ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও বিএনপির হরতালের প্রতি সমর্থন জানান। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ জানান, গতকাল সকাল ১১টায় ইলিয়াস আলীর বনানীর বাসায় যান কাদের সিদ্দিকী। এ সময় বঙ্গবীরের স্ত্রীও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কাদের সিদ্দিকী সেখানে বলেন, 'আমি হরতালের পক্ষে নই। তবে এবারের হরতাল শুধু আমি একা নই, দেশের ১৬ কোটি মানুষ সমর্থন করবে।'
১৮ দলীয় জোটের সমর্থন : ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো পৃথক বিবৃতিতে মাঠে থেকে সর্বাত্মকভাবে হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে। দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি, এনডিপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও পিপলস লীগ।
নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। শ্যামপুর ও কদমতলী থানায় বিক্ষোভ মিছিল করার সময় বিনা উসকানিতে পুলিশের নির্বিচার লাঠিপেটায় যুবদলের নেতা আলমগীর হোসেন, শ্রমিক দলের নেতা মাহবুব হোসেন, পাপন হোসেন, বাবুল আহমেদসহ ১১-১২ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে।
নিউ মার্কেট থানা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করার সময় বিএনপির নেতা মো. মাজেদুলসহ ১৩-১৪ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কাফরুল থানা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশের আকস্মিক হামলায় কাফরুল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মতিসহ ২৫ জনের অধিক নেতা-কর্মী আহত হন। এ ছাড়া যুবদল নেতা টুটুল, হক, শামসু, আলী হোসেনসহ সাতজনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
শান্তিনগর এলাকায় গতকাল বিকেলে এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে মালিবাগ মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পাঁচ-ছয়জন আহত হন এবং এলডিপি নেতা জাহিদ হোসেন বুলবুল ও ইকবাল হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে এলডিপি।
উত্তরা থানা এলাকায় মিছিলের সময় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রায়হান এবং যুবদল মহানগরী উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীরের গাড়িচালক মো. মিলন ও মো. সোহেলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
জাসাস ঢাকা মহানগরী উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফুর রহমান মোল্লা, সহসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ সবুজকে গতরাতে নিজ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.