‘জীবন তো স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটছে’

টেনিসে সাবেক হয়েছেন ২০০৭ সালে। তবে বিশ্ব টেনিসের হালহকিকত সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল মার্টিনা হিঙ্গিস। পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সাবেক এক নম্বর অনেক বিষয়েই বললেন টেনিস সাময়িকীকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে
 এখনকার কোন খেলোয়াড় ঠিক আপনার মতো খেলেন বলে মনে করেন?


মার্টিনা হিঙ্গিস: ওরা তো সবাই প্রায় ছয় ফুট লম্বা। তাই তুলনা করাটা মুশকিল (হাসি)। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা ও মারিয়া শারাপোভা দেরিতে হলেও খুব ভালো খেলছে। আমি সত্যিই আজারেঙ্কার খেলাটা পছন্দ করি। আমার খেলা শেষ কোনো টুর্নামেন্টে আমি তার বিপক্ষে খেলেছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল, সে খুব ভালো খেলছে, আর এই মেয়েটার গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের সামর্থ্য আছে।
 ১৯৯৭ সালে আপনি যেমন টানা অনেকগুলো ম্যাচ জিতেছিলেন, এবার আজারেঙ্কাও তো সেটাই করলেন...
হিঙ্গিস: ও অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমার মনে আছে, কোর্টে নামার সময় ভাবতাম, আমি হারতে পারি না। এটা বড় একটা সুবিধা। কারণ, আপনি নার্ভাস নন এবং ভালো খেলছেন। আর এই সময়ে অন্য কারও পক্ষে আপনাকে হারানো খুবই কঠিন।
 আজারেঙ্কা বলেছেন আত্মবিশ্বাসটা অতিকথন। সাফল্যের পেছনে কঠোর পরিশ্রমটাই সব। আপনি কী বলেন?
হিঙ্গিস: ও সব সময়ই ভালো খেলত। কিন্তু গ্র্যান্ড স্লামের কোয়ার্টার বা সেমিফাইনালে বড় খেলোয়াড়দের ও হারাতে পারত না। আমি ঠিক জানি না, সে নার্ভাস বা এ রকম কিছু ছিল কি না। অনেক সময় প্রথম বা দ্বিতীয় রাউন্ডে আপনাকে কঠিন ম্যাচ খেলতে হতে পারে। কিন্তু কোয়ার্টার থেকেই আপনাকে সেরা খেলাটা খেলতে হবে। ওকে আগে সেটা করতে দেখতাম না। গত বছরের ডব্লুটিএ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠাটাই বোধ হয় ওর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এর পর থেকেই সে ভালো খেলছে। আমি মনে করি, শারীরিক সামর্থ্য ও মানসিক শক্তি দুটোকেই সে কাজে লাগাচ্ছে। ম্যাচের পর ম্যাচ জিতলে আত্মবিশ্বাসটা এমনিতেই চলে আসে।
 টেনিস নিশ্চয়ই অনেক দেখেন? কার খেলা দেখে সবচেয়ে ভালো লাগে?
হিঙ্গিস: অবশ্যই। বিশেষ করে, এখন যেহেতু অনেক জায়গায় আমন্ত্রণ পাই, স্বভাবতই খেলাটা বেশি দেখা হয়। আজারেঙ্কা অবশ্যই দারুণ খেলছে, আর তার খেলা দেখাটাও মজার। তবে আরও অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা শীর্ষস্থানের জন্য লড়তে পারে। ছেলেদের টেনিসে আমি ফেদেরার-নাদাল দ্বৈরথটা উপভোগ করি। জোকোভিচ কতদিন শীর্ষস্থানটা ধরে রাখতে পারে, সেটাও দেখার।
 পেশাদার টেনিসে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে?
হিঙ্গিস: না, একদমই না। জীবনটা তো বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটছে, বিভিন্ন প্রদর্শনী ম্যাচও উপভোগ করছি। এ ছাড়া একটি টেনিস একাডেমিতে কোচিং করাই। এগুলোই যথেষ্ট। আমি তো দৈনন্দিন কাজকর্ম, অনুশীলন আর ভ্রমণ কোনোটাই মিস করছি না।
 উইলিয়ামস বোনদের মতো আপনার সমসাময়িক অনেকেই এখনো শীর্ষ পর্যায়ে খেলে যাচ্ছেন। এটা আপনাকে অবাক করে না?
হিঙ্গিস: না। যতদিন তাদের শরীর ঠিক থাকবে, জয়ের ক্ষুধাটা থাকবে, ঠিক আছে। আমি মনে করি, একেক জনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্তটা একেক রকম।
 টেলিভিশন ধারাভাষ্যের ব্যাপারে কী ভাবছেন?
হিঙ্গিস: আরও বেশি সময় দিতে পারলে ভালো হতো। ২০০৪ সালে ধারাভাষ্য দিয়েছি। কিন্তু এখন আর এটা নিয়ে একেবারেই ভাবছি না।
 কোচিং কেমন চলছে?
হিঙ্গিস: আমি ১৭ থেকে ২১ বছরের পাঁচটি মেয়েকে সাহায্য করছি। পর্দার পেছনে থেকে ধারাভাষ্য দেওয়ার চেয়ে কোর্টে নেমে অন্যকে সাহায্য করাটাই আমার বেশি ভালো লাগে। এটা ঠিক কোচিং নয়, কিছুটা পরামর্শকের মতো কাজ। ওই মেয়েগুলোর সঙ্গে আমি সব সময় সফর করি না। আমি যখন দেশে থাকি, তখনই যাই। আর মাঝেমধ্যে গ্র্যান্ড স্লামগুলোতে যাই।
 সাবেক টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে জীবনটা কেমন উপভোগ করছেন?
হিঙ্গিস: আমি উপভোগ করছি। কে করে না? আজ আমি যে জীবনটা উপভোগ করছি, তার পুরোটাই তো টেনিস থেকে পাওয়া। সারা জীবন যে জন্য কাজ করেছি, তার সুফলটা বছর দুয়েক ধরে পাচ্ছি।
 প্রদর্শনী ম্যাচ ছাড়াও কি আপনি টেনিস খেলেন ও অনুশীলন করেন?
হিঙ্গিস: আমি শরীরটা ঠিক রাখতে চাই, তাই অল্পস্বল্প টেনিস খেলি। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে ঘোড়া নিয়েও বের হই।
 প্রতিযোগিতামূলক হর্স-জাম্পিংয়েও কি এখনো বেশ সময় দেন?
হিঙ্গিস: আগের মতো নয়। গত বছর তো নয়, এ বছরও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি। প্রদর্শনী টেনিস ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান নিয়েই এখন বেশি ব্যস্ত। ঘোড়ার ব্যাপারটা আসে শুধু দেশে থাকলেই বা যখন স্বামীর সঙ্গে ঘোড়ার প্রদর্শনীতে যাই।
 মেয়েদের টেনিস পোশাকের ব্যবসা কেমন চলছে? আপনি এতে কতটা সময় দিচ্ছেন?
হিঙ্গিস: এর সঙ্গে আমি বেশ ভালোভাবেই জড়িত। আমি নকশা করতে সাহায্য করি, ভ্যাঙ্কুভারে টনিকের কার্যালয়ে সময় দিই। টনিক টেনিস অ্যাপারেলের প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারটা তো আছেই।
 আপনি এখনো বেশ লড়াকু। সেটা প্রদর্শনী ম্যাচেও দেখা যায়। এই লড়াকু মানসিকতা প্রকৃতি প্রদত্ত, নাকি অন্য কিছু?
হিঙ্গিস: হ্যাঁ, এটা আমি মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি।
 কোচ হিসেবে দু-তিনটি পরামর্শ দিতে বলা হলে কী পরামর্শ দেবেন?
হিঙ্গিস: খেলাটিকে বুঝতে হবে, গভীরভাবে মিশে যেতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটাকে উপভোগ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.