সাফল্য পেতে বার ও বেঞ্চকে একাত্ম হতে হবে-সুপ্রিম কোর্টে মামলা নিষ্পত্তি

সুপ্রিম কোর্টে চার মাসে ৫০ হাজার মামলার নিষ্পত্তির তথ্য প্রমাণ করে, মামলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল একটি অনিয়ম বাসা বেঁধে ছিল। মাননীয় প্রধান বিচারপতির বিশেষ উদ্যোগের কারণেই সহজে সুফল পাওয়া সম্ভব হলো। তাঁকে এ জন্য অভিবাদন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি আগামী ১৮ মে অবসরে যাবেন।


সুতরাং, আমরা আশা করব, সুপ্রিম কোর্টের মামলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বে এখনই একটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে। অ্যাডহক ব্যবস্থার আওতায় যে জগদ্দল পাথর নড়তে শুরু করেছে, তাকে এখন পদ্ধতিগত ব্যবস্থায় আনতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে আমরা একমত, যেসব মামলার নিষ্পত্তি ঘটেছে, সেগুলো তেমন ‘উল্লেখযোগ্য’ নয়। সত্যি অনেক ক্ষেত্রে মৃত মামলাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা অপরিহার্য ছিল।
আমাদের অবশ্যই মৌলিক মামলাগুলোর রায় পেতে হবে। একই সঙ্গে তার লিখিত রূপও পেতে হবে। কোনোকালে কেউ একটা জামিনের দরখাস্ত করেছিলেন। একটা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে তিনি বা তাঁরা হয়তো একটি রুলের সঙ্গে জামিন পেয়েছিলেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে শুধু রুল জারি হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে মূল মামলার বিচার শেষ হয়ে হয়তো অভিযুক্ত খালাস পেয়েছেন বা তাঁর সাজা খাটাও শেষ হয়েছে। কিন্তু জামিনের রুল এখনো ঝুলছে। সংখ্যার বিচারে এসবের নামও বিচারাধীন মামলা। এ ধরনের তথাকথিত ‘বিচারাধীন মামলার’ সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়। সুতরাং, এসব মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চয় একটি অগ্রগতি। কিন্তু এটা বিচার-প্রক্রিয়ার গতিশীলতা থেকে অনেক দূরে।
রিট বা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি আপিলের দ্রুত রায় পাওয়া হলো গতিশীলতা। আবার প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে পেতে হবে। সম্প্রতি ভারতের সংসদে উঠেছে বিচার বিভাগের জবাবদিহি বিল। এই বিলের একটি খসড়া বিধানের দিকে আমাদের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এতে রায় ঘোষণার পর পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় প্রকাশের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিচার বিভাগ বোধগম্য কারণেই সংবেদনশীলতা দেখান। সরকারি বিলে সেটি তাই বাদ পড়ে। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে রায় ঘোষণা এবং তার লিখিত রূপ পাওয়ার মধ্যে বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি হয়। কখনো বছর পর্যন্ত গড়ায়। এটা চলতে পারে না।
গত দুই দশকের মধ্যে আমরা এমন কোনো প্রধান বিচারপতিকে পাইনি, যিনি একটি দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। সে কারণে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের অনেকে সমস্যা স্বীকার করলেও তা নিরসনে তাঁদের সময়স্বল্পতার উল্লেখ করেন। কিন্তু এতে ব্যক্তির দায়মোচন হলেও সুপ্রিম কোর্টের দায়মোচন ঘটে না। আইনজীবী সমিতির চলতি আন্দোলনের ইস্যু সংকীর্ণ পেশাগত। উল্লেখযোগ্য মামলা নিষ্পত্তিতে বার ও বেঞ্চকে অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আমরা বর্তমান প্রধান বিচারপতি মামলাজট নিরসনে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা এবং অধিকতর সাফল্য কামনা করি।

No comments

Powered by Blogger.