গণপরিবহনে আগুন চালক পুড়ে কয়লা

বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আগের দিন গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন এক বাসচালক। তাঁর নাম বদর আলী বেগ (৪০)। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরপুর, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, ফার্মগেট, আজিমপুর, বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরায় ১০টি বাস এবং একটি মাইক্রোবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।


বাস ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার অভিযোগে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরপুর ও শান্তিনগর এলাকা থেকে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পুলিশের অভিযান চলছিল বলে জানা গেছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় থানাগুলোতে মামলার প্রক্রিয়া চলছিল বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে খিলগাঁও খিদমাহ্ হাসপাতালের সামনের রাস্তায়, আজিমপুর ইডেন কলেজের সামনে, গুলিস্তান মোড়ে ও উত্তরার আবদুল্লাহপুরে চারটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে খিলগাঁওয়ের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। অন্য ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৪ লাখ টাকা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী ও খিলগাঁও থানার এসআই ইকবাল আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে জানান, খিলগাঁওয়ে খিদমাহ্ হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে ঈগল পরিবহনের একটি বাস (যশোর-ব-১১-০০১৯) পার্ক করা ছিল। দীর্ঘ যাত্রার পর ক্লান্তি নিয়ে বাসে ঘুমিয়ে ছিলেন চালক বদর আলী বেগ ও হেলপার মোতালেব। দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ আশপাশের লোকজন দেখতে পায় বাসটি জ্বলছে। আগুনের বিষয়টি বুঝতে পেরে মোতালেব দ্রুত বাস থেকে নামতে সক্ষম হলেও চালক বদর আলী আর বেরোতে পারেননি। তিনি আগুনে পুড়ে মারা যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে দ্রুত বাসের আগুন নেভান। লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হরতালের আগে আতঙ্ক সৃষ্টি জন্যই বাসটি পোড়ানো হয়। খিলগাঁও থানার এসআই ইকবাল আহম্মেদ আরো জানান, এ ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তার না হলেও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে এসআই জানান, বদর আলী ঢাকা-খুলনা রুটে ঈগল পরিবহনের বাস চালাতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামুরদার পূর্বপাড়া গ্রামে। বদর মৃত হাসান আলী বেগের ছেলে। তিনি তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুর ২টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বাসের চালক শামীম কালের কণ্ঠকে জানান, দুপুর ২টার দিকে বিহঙ্গ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-২২০০) একটি বাস তিনি চালিয়ে পল্লবী থেকে ঢাকেশ্বরীর দিকে যাচ্ছিলেন। বাসটি নিউ মার্কেটের পাশের ওভারব্রিজের সামনে এলে তিন যুবক বাসে ওঠে। তারা উঠেই বাসের সব যাত্রী নামিয়ে দেয় এবং বাসে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। এ অবস্থায় শামীম বাস নিয়ে দ্রুত সামনের দিকে এগোতে থাকেন। বাসটি নিলক্ষেত মোড়ে আসতেই যুবকরা বাস থেকে লাফিয়ে নেমে পালিয়ে যায়। শামীম বাসটি চালিয়ে ইডেন কলেজের সামনে পর্যন্ত এসে নেমে পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে বাসের আগুন নেভান। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, আগুনে ৪০ সিটের বাসটির প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
লালবাগ থানার ওসি আজিজুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গাড়িটিতে নিউ মার্কেট এলাকায় আগুন লাগলেও চালক বাসটি চালিয়ে ইডেনের সামনে পর্যন্ত চলে আসেন। এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হরতালের সর্মথকরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।'
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে জানান, উত্তরার আবদুল্লাহপুরের স্লুইসগেট বেড়িবাঁধ এলাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-জ-১১-১৯০০) একটি বাসে উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত বাসের আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এতে দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। উত্তরা থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনা কেন বা কারা ঘটিয়েছে- এ বিষয়ে তাঁরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর পৌনে ২টার দিকে গুলিস্তান মোড়ে ৬ নম্বরের একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আশপাশের লোকজন দ্রুত বাসটির আগুন নিভিয়ে ফেলে।
পল্টন থানার ডিউটি অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে গুলিস্তানে কমল পরিবহনের একটি বাসের সিটে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় কিছু যুবক। সোয়া ৪টার দিকে ফকিরাপুল এলাকায় জনপ্রশাসন বিভাগের একটি মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো-চ-৫১০০৩০) একইভাবে আগুন লাগানো হয়। এসব আগুনের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়নি।
সূত্রাপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, বিকেল ৫টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে জমজম পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-জ-১১-০০৪২) আগুন লাগিয়ে দেয় উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
মিরপুর থানার ডিউটি অফিসার আবদুল লতিফ জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর ১ নম্বর চত্বর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগিয়ে দেয় কিছু যুবক। এর আগে বিকেলে বাস ভাঙচুরের চেষ্টাকালে সাতজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে গতকাল দুপুরে শান্তিনগর এলাকায় মিছিল ও ভাঙচুরের চেষ্টাকালে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল রাতে ফার্মগেটের খামারবাড়িতেও একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক আবদুল হাই জানান, খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের উত্তর পাশের রাস্তায় লাব্বাইক পরিবহনের একটি বিকল বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪২৮৩) পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা ছিল। রাত সোয়া ৮টার দিকে কে বা কারা ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তায় বাসটির আগুন কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১০টার দিকে বনানীর ১১ নম্বর সড়কে কে বা কারা জলসিড়ি পরিবহন নামের একটি বাসে আগুন দেয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে আগুন নেভানের আগেই বাসের অনেকাংশ পুড়ে যায়।
এ ছাড়া রাত পৌনে ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বও গোল চত্বরে গার্মেন্ট শ্রমিক পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয় কিছু যুবক। তবে এ বাসটিও সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.