আড়িয়ল বিলের ঘটনায় গণহয়রানি বন্ধ করুন-গণমামলা

আড়িয়ল বিলে মেগা বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প সরকার প্রত্যাহার করে নিলেও বিল বাঁচানো আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মেগা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। যে মামলায় ২১ হাজার মানুষকে আসামি করা হয়, সেই মামলার উদ্দেশ্য গণহয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়।


কেবল তা-ই নয়, সমাজের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদেরও এই মামলার আসামি করা স্পষ্টতই পুলিশের ধৃষ্টতা। শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তাঁর ভাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আমানুল ইসলাম চৌধুরী এবং আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে পরমাণুবিজ্ঞানী ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকীকেও। পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে, হক-বেহক অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মামলার ওজন বাড়িয়েছে। কিন্তু এর দুর্নাম সরকার নেবে কেন?
আন্দোলনে সমর্থন দেওয়াকে কি পুলিশ তাহলে অপরাধমূলক কাজ মনে করে? তা যদি হয়, তাহলে কেবল আড়িয়ল বিল এলাকার লাখ লাখ মানুষই নয়, সারা দেশের অজস্র মানুষকেও আসামি ভাবতে হয়। দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার অসংখ্য মানুষের সমর্থন এই আন্দোলন পেয়েছিল। আড়িয়ল বিল প্রকল্প যেমন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের ফল, তেমনি এ রকম গণহারে মামলা করাও পুলিশের হঠকারিতার ফল। একদিকে থানা থেকে অস্ত্র লুটের আসামি ১১ সর্বহারা সদস্যের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়, অন্যদিকে নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন বলেই গণ্য হবে।
প্রস্তাবিত বিমানবন্দর বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা-মাওয়া সড়কে পুলিশ ও জনতার মধ্যে দুঃখজনক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গণরোষের শিকার হয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং আহত হয় অনেক গ্রামবাসী। ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল কি না, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। পুলিশের দিক থেকেও দায়িত্বহীন অ্যাকশন নেওয়া হয়েছিল কি না, সেটাও দেখা দরকার। এ রকম পরিণতির দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এড়াতে পারে না। আশা করি, সরকার যেমন ভুল প্রকল্প বাতিল করে সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছে, তেমনি অসদুদ্দেশ্যে দায়ের করা গণমামলাও প্রত্যাহার করে নেবে।

No comments

Powered by Blogger.