বাংলাদেশের সংবিধানে চাই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন by মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন

১৯৭২ সালে ওয়াইজঘাটের মুন সিনেমা হল পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। এ সম্পত্তির মালিকানা ফেরত পেতে ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের তত্কালীন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মুন সিনেমা হলের মালিকানাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণসহ ২২টি মতামত দেন। এই মতামতের ২ নং-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য সব আইন, কর্মকাণ্ড ও প্রক্রিয়া সংবিধানসম্মত হতে হবে। যে কোনো আইন বা কার্যক্রম সংবিধান পরিপন্থী হলে অবৈধ বা অস্তিত্বহীন বলে বিবেচিত হবে। (সূত্র : আমাদের সময়, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০)
একই মতামতের ১৪ নং-এ বলা হয়েছে, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সব সামরিক ফরমান অবৈধ কেননা ওই আদেশগুলো একজন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ব্যক্তি জারি করেছিলেন। এসব আদেশের দ্বারা সংবিধানকে সামরিক আইনের চেয়ে খাটো করা হয়েছে, এসব আদেশ সংবিধানের অমর্যাদা করেছে, যদিও সংবিধান জনগণের ইচ্ছার ফসল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণেরও অমর্যাদা করা হয়েছে। উল্লিখিত সময়কালে বাংলাদেশ কোনো জনপ্রতিনিধির বদলে সামরিক একনায়ক দ্বারা শাসিত হয়েছে। এই সময় বাংলাদেশ ও তার জনগণ স্বাধীন-সার্বভৌম চরিত্র হারিয়ে একনায়কদের অধীনে পরিচালিত হয়েছে, (সূত্র : আমাদের সময়, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০)।
হাইকোর্টের রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণসহ যে ২২টি মতামত দেন তার দুটি এখানে উল্লেখ করা হলো। অবশ্য ১৪ নং মতামতটি আংশিক উল্লেখ করা হয়েছে আমার আলোচনার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় মনে করে। আলোচ্য দুটি মতামতে সংবিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, সংবিধান হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন বা ফসল। যদি তাই হয় তবে একথা স্বীকার করে নিতে হবে, সংবিধান প্রণয়ন প্রশ্নে জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সংবিধান প্রণয়ন প্রশ্নে জনগণের ক্ষমতাকে সার্বভৌম ধরে নিয়ে জনগণের ইচ্ছার ফসল হিসেবে সংবিধান রচনা হলে সেই সংবিধানকে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটে দেয়াটাই যথাযথ পদ্ধতি হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মুজিবনগরে পাঠ করা হয় ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’। তাতে বলা হয়, ‘ঘোষণা দিতেছি ও প্রতিষ্ঠা করিতেছি যে, বাংলাদেশ হইবে সার্বভৌম জনগণের প্রজাতন্ত্র।’ অতঃপর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘বাংলাদেশের সাময়িক সংবিধান’ ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি জারি হয় এবং তার ৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের এলাকা (পাকিস্তানের) জাতীয় সংসদে ও (পূর্ব পাকিস্তানের) প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠিত হবে। ১০ মার্চ বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ৩৪ জন সংসদ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ গণপ্রজাতন্ত্রের সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হয়, যার উল্লেখ ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা’ ভাগে করা হয়। ‘এতদ্বারা আমাদের এই গণপরিষদে, অদ্য তেরশত ঊনআশি বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসের আঠারো তারিখ, মোতাবেক ১৯৭২ খৃস্টাব্দের চার নভেম্বর তারিখে, আমরা এই সংবিধান রচনা ও বিধিবদ্ধ করিয়া সমবেতভাবে গ্রহণ করিলাম’ (সূত্র : ‘বাংলাদেশের আদি সংবিধানের ক্ষমতা’—মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী)।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের প্রশ্নে পাকিস্তান আমলে নির্বাচিত (বাংলাদেশ এলাকায়) জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক সংসদের ৩৪ জন সদস্যের একটি কমিটি বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে এবং গণপরিষদ সদস্যরা সেটা সমবেতভাবে গ্রহণ করেন। গণপরিষদ সদস্যরা সমবেতভাবে খসড়া সংবিধান গ্রহণ করলেও তা জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটে প্রেরণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং যুক্তিযুক্ত হতো যদি বাংলাদেশের জন্মলগ্নে সংবিধান প্রণয়ন প্রশ্নে ‘সংবিধান সভার’ নির্বাচন করা হতো। জনগণের ভোটে নির্বাচিত এই ‘সংবিধান সভা’ মুক্তিযুদ্ধ প্রতিফলিত জনগণের ইচ্ছাকে লিখিত রূপ দিয়ে, তা জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটে দিতেন। গণভোটে এই লিখিত সংবিধান পাস হলে বলা যেত, বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের ইচ্ছার ফসল। এই ইচ্ছার ফসলে কোনো সংশোধনী আনার চূড়ান্ত মালিক হচ্ছে জনগণ। নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যরা কেবল সংবিধানের শর্ত অনুসারে আইন প্রণয়ন ও দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে পারেন।
বাংলাদেশের সংবিধান যে জনগণের ইচ্ছার ফসল নয় তার মৌলিক প্রমাণ হচ্ছে সংসদ সদস্যদের সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করার কোনো ব্যবস্থা এই সংবিধানে নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নামক সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে অনুচ্ছেদ ৮-এর উপ-অনুচ্ছেদ (২)-এ বলা হয়েছে—‘এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকের কার্যের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবেযাগ্য হইবে না।’
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহি করার অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করার বিধানই এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধান জনগণের ইচ্ছার ফসল হলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের এই অধিকারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলে তারাই হবেন রাষ্ট্রের মালিক, এক্ষেত্রে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হবে জনগণের চাকর। চাকর মালিকের ইচ্ছেমত কাজ না করলে তাকে বদলিয়ে নতুন চাকর নিয়োগ করে মালিকেরা, এটাই হচ্ছে নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানের বিধানের ক্ষমতাবলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা মালিক জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিব্যি পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেন—এক্ষেত্রে জনগণ অসহায়।
কিন্তু সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটির সংবিধান কেন এরকম হলো? জনগণের ইচ্ছার ফসল না হয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ইচ্ছার ফসল তা কেন হলো, এই বিষয়টি বোঝা দরকার। আসলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভুত্বকামী বাংলাদেশের উঠতি ধনিক শ্রেণীর স্বার্থকে কেন্দ্র করে। এই উঠতি ধনিক শ্রেণী নিজেদের স্বার্থকে এ অঞ্চলের জনগণের স্বার্থ বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবি ধনিক গোষ্ঠীর সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের উঠতি ধনিক শ্রেণীর স্বার্থের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের জন্ম। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রভুত্বকারী পাঞ্জাবি ধনিক গোষ্ঠীর সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে বাঙালি উঠতি ধনিক শ্রেণী তাদের স্বার্থ আদায় করতে চেয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যেই। এক্ষেত্রে এদেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাঙালি উঠতি ধনিক শ্রেণী দরকষাকষির ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছিল, কিন্তু এই দরকষাকষি এক পর্যায়ে ভেঙে পড়ে। বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর ওপর নেমে আসে চরম নির্যাতন ও গণহত্যা। এই অবস্থায় পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামো তার টিকে থাকার শর্ত হারায়, জনগণ সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যায়। এরই পরিণতিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম। এদেশের জনগণ ভেবেছিল, পাঞ্জাবি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ-শাসন থেকে মুক্ত হতে পারলে তাদের জীবন যন্ত্রণা থেকে তারা মুক্ত হতে পারবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা আকাঙ্ক্ষাই থেকে গেছে, লাভ হয়েছে এদেশের উঠতি ধনিক শ্রেণীর। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে পূর্বে পাকিস্তানি পাঞ্জাবি ধনিক গোষ্ঠী যেভাবে তাদের স্বার্থকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পর এদেশের উঠতি বাঙালি ধনিক গোষ্ঠী সেই একই পথে তাদের স্বার্থকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাধারণ জনগণ বঞ্চিতই থেকে গেছে। সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী স্বার্থের পৃষ্ঠপোষকতা করে নিজেদের শ্রেণীগত স্বার্থ উদ্ধারের মানসিকতায় আচ্ছন্ন থাকার কারণে এদেশের তত্কালীন উঠতি ধনিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন ও তাকে বৈধতা দেয়ার প্রশ্নে প্রণীত সংবিধানকে গণভোটে দিয়ে জনগণের মতামত যাচাইয়ের পথে অগ্রসর হতে চায়নি। একই কারণে তারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কার্যকলাপের প্রশ্নে সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করার বিষয়টিও বাংলাদেশের সংবিধানে এড়িয়ে গেছে অত্যন্ত সচেতনভাবেই।
এই যদি হয় অবস্থা তাহলে এই দেশের জনগণের স্বার্থে সংবিধান প্রশ্নে আমাদের করণীয় কী? বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশের সংবিধানকে কার্যকর দেখতে চাইলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে এদেশের অর্থনীতি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে তার সপক্ষে জনমত গঠন করা দরকার এবং এসব বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে সোচ্চার হওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার, দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ জনমতই হচ্ছে নির্ধারক শক্তি। এদিক থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আমাদের তত্পর হতে হবে।
সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রতিষ্ঠার অর্থ হচ্ছে দেশীয় অর্থনীতির জাতীয় ধনবাদী বিকাশ যাতে করে সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই কাজ করতে হলে প্রথম শর্ত হচ্ছে দেশীয় অর্থনীতিতে শ্রমসৃষ্ট মূল্যকে দেশীয় অর্থনীতিতে ধরে রাখার ব্যবস্থা করা এবং এই মূল্যকে নতুন নতুন উত্পাদন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো। এই কাজটি করা সম্ভব দেশীয় উত্পাদন ক্ষেত্রের শ্রম বিভাজনের বিস্তার ঘটিয়ে। এই শ্রম বিভাজনের ক্ষেত্রে উত্পাদনের উপায় নির্মাণকারী খাতে স্বনির্ভর হতে সক্ষম হলেই জাতীয় অর্থনীতির জাতীয় ধনবাদী বিকাশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। স্বভাবতই শিল্পনীতি প্রণয়নের প্রশ্নে এ বিষয়টি প্রধান বিষয় হিসেবে আমাদের ভাবতে হবে। উত্পাদনের উপায় নির্মাণকারী শিল্পের প্রসার দেশীয় অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রসার ঘটায়। দেশীয় অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হলে এবং এই বাজারের ওপর জাতীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আমরা দৃঢ়চেতা হলে এদেশের জাতীয় অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হবে যা এদেশে কর্মসংস্থানের প্রাচুর্য সৃষ্টিতে সক্ষম হবে। কর্মসংস্থানের প্রাচুর্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যার ফলাফল হিসেবে দ্রব্যমূল্য নিয়ে এদেশের জনগণকে উত্কণ্ঠিত হতে হবে না। কর্মসংস্থানের সীমাহীন ঘাটতির কারণেই এদেশে দ্রব্যমূল্য কমানোর আওয়াজ জনগণকে আকৃষ্ট করে; কিন্তু ক্ষতি করে উত্পাদন ক্ষেত্রেরই। উত্পাদন খরচের নিচে উত্পাদিত দ্রব্য বিক্রি করতে বাধ্য করার যে কোনো প্রচেষ্টা সার্বিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর চেষ্টা আমাদের রুখতে হবে; কিন্তু তা যেন উত্পাদককে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিক নীতি কাঠামোয় আলোচ্য অর্থনৈতিক বিষয়গুলো যাতে স্থান পায় এবং সেই মোতাবেক এদেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা তাদের কাজের প্রশ্নে বাধ্য থাকে, এই বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ সদস্যরা এর উল্টো কাজ করলে যে কোনো সময় তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ করার অধিকার এদেশের জনগণকে সাংবিধানিকভাবেই প্রদান করতে হবে। তাই প্রয়োজন জনগণকে জীবন-জীবিকার প্রশ্নে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম সাংবিধানিক নীতি কাঠামো নতুনভাবে প্রণয়ন করা অথবা বিদ্যমান সংবিধানের নীতি কাঠামোতে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং সংসদ সদস্যদের জন্য সেটা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য-বাধকতায় নিয়ে আসা। এইসব দিক নিশ্চিত করা গেলে আমরা বলতে পারব, বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন।

No comments

Powered by Blogger.