চরাচর-ভেষজ উদ্ভিদ চাষাবাদ by আজিজুর রহমান

বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ ঔষধি উদ্ভিদ প্রজাতি বা ভেষজ। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইউনানি, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিউটি পার্লার ও প্রসাধনীতে এখন প্রচুর ভেষজ উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাজধানীর ভেষজ ওষুধের কাঁচামালের পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মৌলভীবাজারে যে ৮০টির মতো ভেষজ উপাদান বিক্রি হয়, তার মধ্যে ৩০-৩৫টি উপাদানই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয় হরীতকী। এ ছাড়া আমলকী, তোকমা, তালমাখনা, অশ্বগন্ধা, চিরতা, শতমূলী, আলকুশি, আদাশুট, বহেড়া ইত্যাদি আমদানি করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত যা বাংলাদেশে স্বল্পসময়ে কম জমিতে অধিক হারে উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব_এমন ঔষধি রয়েছে ২৫টির মতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_পুদিনা, ঘৃতকুমারী, থানকুনি, অর্জুন, আমলকী, হরীতকী, কালমেঘ, নিম, বহেড়া, কালিজিরা, বসাক, উলটকমল, অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, তুলসী, মেথি, সোনাপাতা, যষ্টিমধু, বাবলা, শতমূলী, ইসবগুল, আদা, রসুন, হলুদ, পিঁয়াজ ইত্যাদি। বিশ্বব্যাপী ভেষজ ওষুধের বাজার দ্রুতগতিতে প্রসার লাভ করছে। প্রতিবছর বিশ্বে ভেষজের চাহিদা বাড়ছে ১৫ শতাংশ হারে। পাশাপাশি ভেষজ উপাদানের চাহিদা আমাদের দেশেও গত পাঁচ বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেড়েছে।
আমাদের দেশে রয়েছে ভেষজ উৎপাদন উপযোগী উর্বর ভূমি, পর্যাপ্ত পানি ও অনুকূল আবহাওয়া। এক কথায় ভেষজ উদ্ভিদ উৎপাদনের সহায়ক প্রাকৃতিক পরিবেশ। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিশ্ববাজারের কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে ভেষজ উদ্ভিদের উৎপাদন ও চাষাবাদ শুরু হয়েছে। নাটোরের খোলাবাড়িয়া গ্রাম এখন দেশ-বিদেশে ঔষধি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে মীনা হারবাল, সোনারগাঁয়ে হামদর্দের ভেষজ বাগান, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, সাভার, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ অনেক জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ হচ্ছে। এখন প্রয়োজন, সরকারের কার্যকর সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা। সেই সঙ্গে ভেষজ উদ্ভিদ, ওষুধ ও ঔষধি উপাদান উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি সুদূরপ্রসারী এবং সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.