পুরনো ঢাকায় কেমিক্যালের গুদাম-এখনো মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস

রাজধানীর পুরনো এলাকায় বছরকাল আগে রাসায়নিকের গুদাম থেকে সৃষ্ট আগুনে ১২৩ ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। মর্মান্তিক সেই ঘটনার পর সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল পুরান ঢাকায় আর কোনো কেমিক্যালের গুদাম থাকতে পারবে না। অভিযান চালানো হয়েছিল বেশ কয়েকবার সেই সূত্র ধরে।


কিন্তু কোনো কাজই হয়নি এসব নির্দেশ ও অভিযানে। পুরান ঢাকার অলিগলিতে এখনো ছড়িয়ে আছে রাসায়নিক পদার্থের হাজারখানেক দোকান ও গুদাম। এই হিসাব নিয়ে স্থানীয়দের মতভেদ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এ তথ্য দিলেও এলাকাবাসী বলছে, এ এলাকায় অন্তত ১০ হাজারটি রাসায়নিক দোকান ও গুদাম আছে। এসব দাহ্য পদার্থের দোকান ও গুদামগুলো এখানে থাকা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি_এ কথা জানার পরও দোকান মালিক কিংবা গুদাম মালিকরা এখান থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নিতে পারেনি কিংবা অদূর-ভবিষ্যতেও সরিয়ে যে জনজীবন নিরাপদ করা যাবে তাও বলা যাচ্ছে না। নিমতলীর ভয়াল স্মৃতি আমাদের বলে দেয় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সঠিক। আবার সেগুলো ঢাকার ঘনবসতি থেকে যদি সরিয়েও দেওয়া হয় তাহলেও তো এদের কারণে নতুন এলাকা দূষিত হবে। ঝুঁকিপূর্ণ হবে সেই এলাকাও। দাহ্য পদার্থের দোকান ও গুদাম মালিকরা সঙ্গে সঙ্গে একটি জবাব কিন্তু চাইতে পারে। তাহলে তাদের জায়গা হবে কোথায়? বিভিন্ন কারখানার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হতে পারে_'এসব রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়া কি আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা সচল থাকবে?'
পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এসব দোকানের খদ্দের হচ্ছে বিভিন্ন ছোট কারখানা। প্রশ্ন হচ্ছে_এখান থেকে যদি কারখানাগুলো সরানো না হয় তাহলে কাঁচামালগুলোর দোকান সরানো সম্ভব হবে কি না। তার মানে পুরান ঢাকাকে বাসের উপযোগী করতে হলে সর্বাগ্রে কেমিক্যাল ব্যবহারকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। কেমিক্যাল ব্যবহারকারীরা সরে গেলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরাও ঢাকার বাইরে যেতে বাধ্য হবে।
তবে ঢাকার ওই অঞ্চলে যেসব রাসায়নিকের দোকান ও গুদাম আছে সেগুলোর মধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে কাজ করছে খুবই কমসংখ্যক। ফায়ার সার্ভিসের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে এমন কারখানা, গুদাম ও দোকান সীমিত। কারণ সেসব এলাকায় রাস্তাগুলো এতই সরু যে সে পথ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারবে না। বিস্ফোরক দ্রব্য যারা বেচাকেনা করে তাদের বিস্ফোরক অধিদপ্তরে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে। ফায়ার ব্রিগেডের নিয়ম-কানুনেরও ধার ধারে না এসব প্রতিষ্ঠান। আবার পরিবেশগত বিষয়টিও বিবেচনায় আসতে পারে। সেসব এলাকার বৈশিষ্ট্যগতভাবে সেখানকার রাস্তাগুলো খুবই সরু। আগুন লাগলে সেখানে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি পেঁৗছাতে পারবে না। সেখানকার রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব হবে না। কিন্তু নতুন এলাকায় গেলে সেখানে নিরাপদ পরিকল্পনামাফিক এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিতে হবে আগে। অগি্নকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকবে। তারপর সেখানে স্থানান্তর করা হলে তা কার্যকর হবে। তা না হলে নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো আরেকটি বিয়োগান্তক ঘটনা আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.