এক মন্ত্রী ধর্মঘট ডাকেন, আরেক মন্ত্রী প্রত্যাহার করান!-পরিবহন খাতে নৈরাজ্য

দেশের সড়ক পরিবহন খাতে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেকোনো অজুহাতে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা প্রায়শ ঘটছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এসব ঘটনায় ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও মদদ দিয়ে থাকেন।


বুধবার ২১ জেলায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, তাতে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করা যাবে না। উল্লিখিত ঐক্য পরিষদের অন্তর্ভুক্ত পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তিনি নির্বাহী সভাপতি। ঐক্য পরিষদের অন্যতম দাবি, ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের জোকায় সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে গ্রেপ্তার বাসচালকের মুক্তি। ওই দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন। যেকোনো সংগঠন তাদের সদস্যের মুক্তি দাবি করতে পারে। কিন্তু সে জন্য তারা যাত্রীদের জিম্মি কিংবা পরিবহনব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে না।
এর দুই দিন আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে একই সংগঠন ১১ দফা দাবি পেশ করে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়সূচির আগেই ২১টি জেলায় হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকার কী যুক্তি থাকতে পারে? কেবল ধর্মঘট ডেকেই ঐক্য পরিষদের নেতারা ক্ষান্ত ছিলেন না, তাঁরা বিভিন্ন স্থানে সরকারি গাড়িতে হামলা, বিআরটিসির বাসচালককে মারধরের ঘটনাও ঘটিয়েছেন।
বুধবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য পরিষদের নেতাদের যে বৈঠক হয়, তাতে নৌপরিবহনমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেননি। প্রতিনিধিত্ব করেছেন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের।
যোগাযোগমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদ বুধবার দুপুর ১২টায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু সকাল ছয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২১ জেলার যাত্রীদের যে গৃহবন্দী করে রাখা হলো, তার জবাব কী? কেন এই অযৌক্তিক ধর্মঘট? তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কি কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না! মানিকগঞ্জের দুর্ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে একজন চালকও মারা গেছেন। পরিবহনশ্রমিকেরা কি তাঁর হত্যার বিচারও চান না?
যখন পরিবহন খাতের সীমাহীন ব্যর্থতা-অব্যবস্থা নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন বুধবারের ঘটনাটিকে সাজানো নাটক বলেই প্রতীয়মান হয়। এক মন্ত্রীর সংগঠন ধর্মঘট ডেকেছে, আরেক মন্ত্রী দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। যোগাযোগমন্ত্রী কি আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন? আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়াই যখন প্রতিটি আইনানুগ নাগরিকের কর্তব্য, তখন একজন মন্ত্রী কি তার ব্যত্যয় ঘটাতে পারেন?
শ্রমিকদের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। কিন্তু তাই বলে কোনো বিশেষ সংগঠনের সুপারিশ অনুযায়ী বিনা পরীক্ষায় বা নামমাত্র পরীক্ষায় কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে না। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.