পবিত্র কোরআনের আলো-জিহাদে বের হয়ে নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করার নির্দেশ

৯৩. ওয়া মান ইয়্যাক্বতুল্ মু'মিনাম্ মুতাআ'ম্মিদান ফাজাযা-উহূ জাহান্নাম, খা-লিদান ফীহা ওয়া গাদ্বিবাল্লাহু আ'লাইহি ওয়ালা আ'নাহূ ওয়া আআ'দ্দা লাহূ আ'যা-বান আ'য্বীমা। ৯৪. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ ইযা দ্বারাব্তুম ফী ছাবীলিল্লাহি ফাতাবাইয়্যানূ ওয়ালা-তাক্বুলূ লিমান আলক্বা ইলাইকুমুস সালা-মা লাছতা মু'মিনান; তাবতাগূনা আ'রাদ্বাল হাইয়াতিদ্


দুনিয়া; ফাই'দাল্লাহি মাগা-নিমু কাছীরাতুন; কাযা-লিকা কুনতুম্ মিন্ ক্বাবলু ফামান্নাল্লাহু আ'লাইকুম ফাতাবাইয়্যানূ; ইন্নাল্লাহা কা-না বিমা তা'মালূনা খাবীরা। [সুরা : আন নিসা, আয়াত : ৯৩-৯৪]

অনুবাদ
৯৩. যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে অনন্তকাল ধরে পড়ে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ভয়ানক রাগান্বিত; তাকে তিনি অভিশাপ দেন। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
৯৪. হে ইমানদাররা! যখন আল্লাহর পথে জিহাদে বের হবে, তখন বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করবে। কেউ যখন তোমাদের কাছে সন্ধির প্রস্তাব বা সালাম নিয়ে আসে তখন কিছু বৈষয়িক চিন্তায় বা ধনসম্পদ লাভের আশায় বলো না যে, তুমি ইমানদার নও। আল্লাহর কাছে গণিমতের মাল প্রচুর আছে। আগে তোমরাও এমনই ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। কাজেই তোমরা সব বিষয় যাচাই-বাছাই করে নিয়ো। তোমরা যা কিছুই করো, আল্লাহ তায়ালা সে ব্যাপারে সম্যক অবগত আছেন।

ব্যাখ্যা
৯৩ নম্বর আয়াতে কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে এর পরিণতি কী, তা বিস্তারিত বলা হয়েছে। এখানে ধর্মের অবস্থান থেকে পরিণতির কথা বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অবস্থান থেকে নয়। রাষ্ট্রের অবস্থান থেকে এর পরিণতি হলো হত্যাকারী বা হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড। সেটা অন্য জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। ধর্মের দৃষ্টিকোণ ইহজগৎ ও পরকাল বিস্তৃত। এ আয়াতে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এ রকম হত্যাকাণ্ডে হত্যাকারীর পরিণতি হচ্ছে পরকালে জাহান্নাম। সে ওই জাহান্নামে অনন্তকাল ধরে পড়ে থাকবে। তার ওপর আল্লাহর গজব ও অভিশাপ এবং অনন্তকাল ধরে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা আল্লাহ করে রেখেছেন। হত্যাকারীর তওবা কবুল হবে না যতক্ষণ না তার ন্যায্য বিচার হয়। ন্যায্য বিচার হলে এবং বিচারের প্রাপ্য শাস্তি প্রয়োগ করা হলে সে পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে।
৯৪ নম্বর আয়াতে জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধে বের হয়ে যাওয়া সৈনিকদের জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর পথে জিহাদে বের হওয়া সৈনিকদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে তাদের বিচারবুদ্ধি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে। আয়াতটির শানে নুজুল এ রকম_রাসুল (সা.) একবার এক সেনাবাহিনীকে কোনো এক কাফের দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠালেন। সেই কাফের দলে একজন মুসলমানও ছিলেন। সম্ভবত তাঁকে আনা হয়েছিল সন্ধিচুক্তির ব্যাপারে কথাবার্তা বলার জন্য। সেই মুসলিম ব্যক্তি কাফেরদের দল থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে মুসলিম বাহিনীকে সালাম জানালেন। কিন্তু মুসলিম যোদ্ধারা তাঁকে মুসলমান বলে বিশ্বাস করলেন না। ভাবলেন হয়তো প্রাণ রক্ষার জন্যই সে সালাম জানাচ্ছে। মুসলিম বাহিনী সেই সন্ধি প্রস্তাবকারী লোকটির ব্যাপারে কোনো চিন্তা-গবেষণা না করেই তাকে হত্যা করে, তার ধনসম্পদ লুটে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতের আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে যুদ্ধক্ষেত্রেও সঠিক বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বৈষয়িক সম্পদ লাভের আশায় কাউকে হত্যা না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। আসলে জিহাদ গণিমতের মাল লাভের জন্য নয়, বরং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.