বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার-সংকোচন ঠেকাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকোচন হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইতিপূর্বে বহু শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে বাধ্য হয়ে। যেসব দেশ এখনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়েনি, সেখানেও অর্থনৈতিক কারণে তাদের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার সংকুচিত হয়ে আসছে।


এই নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে সৌদি আরবের একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। সৌদি আরব তার নিজ দেশের বেকারদের কর্মসংস্থানের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারটাকে নিরুৎসাহী করতে চাইছে। তারই প্রমাণ হিসেবে তাদের একটি সিদ্ধান্তের কথা বলা যায়। তারা সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সৌদি আরবে অবস্থানকারী বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে যারা ছয় বছরের বেশি সে দেশে অবস্থান করছে তাদের ভিসা নবায়ন করবে না। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য এটি হবে বড় রকমের আঘাত। কেননা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের ৭৩ লাখ কর্মীর ৭৯ শতাংশই উপসাগরীয় এলাকায় কাজ করছে। যার মধ্যে সৌদি আরব সর্বাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেশির ভাগই আবার সেখানে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের কয়েক লাখ শ্রমিককে ফিরে আসতে হবে। ৩৬ হাজারের বেশি শ্রমিক একমাত্র লিবিয়া থেকেই সম্প্রতি ফেরত এসেছে। এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার আগেই যদি আবার কয়েক লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। যার পরিণতিতে সামাজিক সমস্যাও তৈরি হবে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স কমে যাবে অপ্রত্যাশিতভাবে।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে বলে অনেক আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল প্রচারমাধ্যমগুলোতে। সেই অনুযায়ী সরকার যখন নতুন বাজার অনুসন্ধান করবে, এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের জন্য শিরঃপীড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরবকে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও অনুসরণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এমন হলে বাংলাদেশের জন্য এটি হবে মারাত্মক ঝুঁকির বিষয়। এমতাবস্থায় অতি দ্রুত যদি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অর্থনৈতিক অবনতি রোধ করা যাবে না। সরকার যেভাবে মালয়েশিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে রকম পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য অন্তত সংকুচিত না হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারসংক্রান্ত এই দুঃসংবাদের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের জন্য একটি সুখবর প্রকাশ করেছে একটি পত্রিকা। সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশের তিন লাখের বেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বেশির ভাগ শ্রমিকই সে দেশে গিয়েছে অবৈধভাবে। সরকারের চেষ্টায় সেই দেশে অবস্থানকারী সেসব শ্রমিককে সে দেশে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার শর্ত হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বৈধ পাসপোর্ট পাঠাতে হবে। সেই কাজটিও বাংলাদেশ দ্রুততার সঙ্গে করছে। যে কারণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পরিবর্তে হাতে লেখা পাসপোর্ট বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হচ্ছে। এ সবই সরকারি উদ্যোগের সাফল্য। সুতরাং সরকার যদি সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আশা করা যায় সেই দেশেরও সাফল্য আসতে পারে।
বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর এ বিষয়ে তৎপর হওয়ার প্রয়োজন আছে। যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আছে, সেসব দেশের দূতাবাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি শ্রমিকদের যে অভিযোগ আছে তা যেন সরকার তলিয়ে দেখে। তাদের অভিযোগগুলো আসলে আমলে আনা হয় না বলেই আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ়তর করা সম্ভব হয় না। আর আমাদের শ্রমিকদের মধ্যেও এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। তারা প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ্যেই বলে আসছে, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হারাতে বসেছে।
মনে রাখা প্রয়োজন, আমাদের বৈদেশিক আয়ের বড় অংশই এই শ্রমিকরা। তাদের আয় নিশ্চিত করতে না পারলে সরকারের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে, যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.