ধানের বাজারে ফড়িয়া-বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

ইতিমধ্যে বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে বটে; কিন্তু কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। বাম্পার ফলন সত্ত্বেও কৃষকের এই দুশ্চিন্তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। কৃষকের এই দুশ্চিন্তা লাঘবের দায় সরকারের। এখন পর্যন্ত সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার ঘোষণা না দেওয়ার কারণে মধ্যস্বত্বভোগী আর ফড়িয়াদের হয়েছে পোয়াবারো।


ধানের বাজার এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। ২৯ মে 'বাজার ফড়িয়াদের কবজায়, ধানের দাম কমছেই' শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে তা উদ্বেগজনক। প্রতিবছরই অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে সরকার। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকেন কৃষক। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার যে চিন্তা সরকার করছে, এর বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হতে বাধ্য। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির এ দেশে কৃষক এমন প্রেক্ষাপটে উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে, ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমনটি কোনোভাবেই আমাদের জন্য সুখকর হবে না। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে খাদ্য মজুদ করে নিরাপত্তা গড়ে তুললে কমবেশি লাভ সবারই। দেশের টাকা দেশেই শুধু থাকবে না, কৃষকও তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
ক্রমেই উৎপাদন খরচ বাড়ছে। নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে কৃষক উৎপাদনের চাকা সচল রেখেছেন। কিন্তু তাঁরা যদি উৎপাদন খরচ না ওঠাতে পারেন, লাভ না করতে পারেন, তবে নতুন করে তাঁরা সমস্যাক্রান্ত হবেন এবং এ সমস্যা দেশের জন্য বড় ধরনের অমঙ্গলের কারণ হবে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ উৎপাদন হারাবে এবং এমনটি হলে দেশের অর্থনীতির জন্য তা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সঙ্গে সঙ্গে বাজার দাপিয়ে বেড়াবে অশুভ চক্র, যে চক্রটি খাদ্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা জিইয়ে রেখে নিজেদের উদর ভরছে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। সরকারও কৃষকের আস্থা হারাবে। ফড়িয়া, দালাল, মজুদদার, অসাধু চালকল মালিকদের অতীতের স্বেচ্ছাচারিতা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তাদের অশুভ কর্মকাণ্ড দমাতে সরকার নানা রকম ব্যবস্থাও নিয়েছিল। কিন্তু এখন সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তাদের আখের গোছানোর রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে। ধানের বাজার মনিটর করার জন্য সরকারের কোনো নির্দেশনাও এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন পায়নি বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ। সব কিছু মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অনিশ্চয়তার।
আমরা মনে করি, কৃষকের স্বার্থ ও উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে এবং উৎপাদনের ধারা অব্যাহত ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। খাদ্য নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে সরকারের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে এবং সার্বিক স্বার্থে তা নিশ্চিত করতেই হবে। অনস্বীকার্য যে সরকারের তরফে গৃহীত নানা রকম ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণেই কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে উৎপাদন বাড়াতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। যেহেতু এবার ফলন ভালো হয়েছে, তাই উদ্বৃত্ত থাকবেই। সেই উদ্বৃত্ত ফসল নিয়ে কৃষক তো বিপাকে পড়বেনই, যদি সরকার দূরদর্শী পদক্ষেপ না নেয়। এমনিতেই তো উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ নিয়ে কৃষক বিপাকে আছেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা এরই সুযোগ নিচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি, কৃষক যাতে উৎপাদন খরচ উঠিয়ে পুষিয়ে নিতে পারেন এবং ভবিষ্যতে উৎপাদনে অধিক আগ্রহী হন, সে রকম ব্যবস্থা সরকার দ্রুত নিশ্চিত করবে।

No comments

Powered by Blogger.