অবিলম্বে ডিসিসি নির্বাচন দিন-বিভক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান

গত সোমবার ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) ১৮তম সভায় সর্বসম্মতভাবে মেয়র ও কাউন্সিলররা ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডিসিসি বিভক্ত করার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর প্রতিবাদে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা।


ডিসিসির বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির নেতা হলেও এ সিদ্ধান্তকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, ডিসিসিতে বর্তমানে অনেক নির্বাচিত কাউন্সিলর আছেন, যাঁরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক। আছেন জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সমর্থক কাউন্সিলরও।
এ ক্ষেত্রে ডিসিসিকে বিভক্ত না করে কীভাবে এই মহানগরের উন্নয়ন এবং বাসিন্দাদের সমস্যার সমাধান করা যায়, সেদিকেই মনোযোগী হতে হবে সরকারকে। ডিসিসির মূল সমস্যা এর আকার বা জনসংখ্যা নয়। সমস্যা হলো, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের বৈরী ও বিমাতাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি। সংবিধানে যে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার বা প্রশাসনের বিধান আছে, তা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা আন্দোলনে আছেন নির্বাচনের পর থেকেই। সরকার নতুন নতুন সিটি করপোরেশন গঠন করলেও তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। যে কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের টক্করলেগে আছে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করা সম্ভব।
এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ৪০০ বছরের পুরোনো রাজধানী শহর ঢাকাকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া হয়নি। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সরকার বাসিন্দাদের মতামত নিতে পারত। কিন্তু তা না করে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেভাবে ডিসিসিকে ভাগ করার উদ্যোগনেওয়া হলো, তা কেবল অগণতান্ত্রিকই নয়, আত্মঘাতীও।
ডিসিসি বিভক্তিকরণের যুক্তি হিসেবে লোকসংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এটি খোঁড়া যুক্তি। পৃথিবীতে এর চেয়ে ঢের বেশি জনসংখ্যার নগরগুলো একটি করপোরেশনের অধীনে থাকতে পারলে ঢাকা পারবে না কেন? ডিসিসি বা অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মূল সমস্যা হলো, তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্যে অসংগতি এবং প্রতিটি পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ। ঢাকা মহানগরের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে সরকারের ৫২টি সংস্থা জড়িত, যাদের ওপর ডিসিসির ন্যূনতম কর্তৃত্ব নেই।
এ সমস্যার সমাধানে ডিসিসির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ নগর সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার দৃষ্টান্ত অনেক দেশেই আছে। সরকার সেই প্রস্তাব আমলে নেয়নি। বিকল্প হিসেবে পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তা-ও কাজ করেনি।
আমরা মনে করি, ডিসিসিকে বিভক্ত করলে কোনো লাভ হবে না; বরং কেন ডিসিসি নগরবাসীর সমস্যার সমাধান করতে পারছে না, সেই কারণ অনুসন্ধান জরুরি। ভাগাভাগি না করে সরকারের উচিত, অবিলম্বে ডিসিসির নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।

No comments

Powered by Blogger.