চিহ্নিত চক্রের দ্রুত বিচার করুন-জাল নোটের মহোৎসব

জাল নোট তৈরিতে সক্রিয় থাকা ২১টি চক্র খুঁজে বের করা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জন্য নিশ্চয়ই একটি সাফল্য। একই সঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করে যে এই চক্রগুলোর হোতাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কি না। জাল নোটের আধিক্য সাম্প্রতিক কালে একটি আন্তর্জাতিক উপদ্রবে পরিণত হয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্র ১০০ ডলারের নোটে পরিবর্তন এনেছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়া জাল নোট ঠেকাতে পলিমার নোটের প্রচলন করেছিল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৬টি দেশ এই নোট গ্রহণ করেছে।
নোট প্রচলনের মতো জাল নোটের ইতিহাসও পুরোনো। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যখন অস্থিরতা চলছে, মূল্যস্ফীতি গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন জাল নোটের ছড়াছড়িকে ঝুঁকিপূর্ণ হুমকি হিসেবে গণ্য করতে হবে। কারণ, জাল নোট প্রকৃত অর্থের মূল্য কমায় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সাহায্য করে। জাল নোট প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে, নোটের নকশা ও মুদ্রণে উন্নত মান নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেসব নোট বাজারে ছেড়েছে, এর গুণগত মান নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কম নয়। তবে সবচেয়ে বড় হুমকি, জাল নোট তৈরির চক্রের আন্তসীমান্ত আঁতাত। সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক পাকিস্তানি নারীর লাগেজ থেকে প্রায় এক লাখ ডলারের সমপরিমাণ ভারতীয় জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ২৫ অক্টোবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, ভারতের সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের (সিসিবি) একটি স্পেশাল টিমের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মালদহ জেলার ২০টি গ্রামকে জাল নোট ছড়ানোর আখড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সীমান্তের দুই পাশেই শিথিল নজরদারির কারণেই এমনটি ঘটছে। উভয় সীমান্তের দুই-তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধে প্রতি মাসে অন্তত এক কোটি টাকার লেনদেন হয় বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ২৫ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাল নোট মুদ্রণের কারখানার বিষয়ে তেমন বিস্তারিত কিছুর উল্লেখ নেই। তবে আশঙ্কা করা যায়, জাল নোট মুদ্রণের প্রযুক্তির সঙ্গে আন্তসীমান্ত জাল নোট তৈরি ও বাজারজাত চক্রের যোগসাজশ থাকাও স্বাভাবিক।
আমরা আশা করব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যে ২১টি চক্রকে শনাক্ত করেছে, তাদের সম্পর্কে প্রাপ্ত সব তথ্য গণমাধ্যমকে অবহিত করবে। জাল নোটের বিষয়টিকে কোনো ক্রমেই রুটিন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না। জাল নোটের বাড়বাড়ন্ত এই অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সমাজে শক্তিশালী মাফিয়া চক্রের উত্থান ঘটতে পারে। বাংলাদেশে বছরে কী পরিমাণ জাল নোটের অর্থনীতি গড়ে উঠেছে, সে বিষয়ে সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। ১৭ অক্টোবর আইবিএন-সিএনএনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি রুপির নোট ভারতে ঢুকে থাকতে পারে। এর নেপথ্যে নাম উঠেছে দাউদ ইব্রাহিমের। সুতরাং আমাদের সমাজে জাল নোট চক্রকে এখনই শক্ত হাতে দমন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.