নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্য-প্রধান দুই দলের নমনীয়তাকে স্বাগত জানাই

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও'ব্লেক তাঁর সফরকালে একাধিকবার যে কথাটি বলেছেন, তা হলো তত্ত্বাবধায়কই হোক কিংবা নির্দলীয় অন্য কোনো সরকার ব্যবস্থাই হোক, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক এবং তাতে সব দলের অংশগ্রহণ থাকুক।


তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময়ও একই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং এ ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পেঁৗছার চেষ্টা করা হবে বলে উভয় নেত্রীই তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তাঁদের এই আশ্বাসকে স্বাগত জানাই। কারণ, এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া নয়, বাংলাদেশের বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষেরই চাওয়া। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত জনমতের যে প্রতিফলন দেখা গেছে, তাতেও এটা স্পষ্ট বাংলাদেশের মানুষের প্রধান চাওয়া, দুই নেত্রী আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় আসুন এবং আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, সেজন্য সম্ভাব্য সব কিছু করুন। কারণ, নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, এটা কারোই কাম্য নয়।
আমরা দুই নেত্রীকে স্বাগত জানাই আরো একটি কারণে যে ইতিমধ্যে তাঁরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথেষ্ট নমনীয়তা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। এক সময় বিএনপির একমাত্র কথা ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। বর্তমানে তাঁদের কথাবার্তায় এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলেও নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন কোনো ব্যবস্থায় নির্বাচনে যেতে তাঁদের আপত্তি নেই। সরকারি দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় কোনো ব্যবস্থার পরিকল্পনা থাকলে সংসদে এসে তা উপস্থাপন করতে, যুক্তিসঙ্গত হলে তা মেনে নেওয়া হবে। সংসদের বাইরে কিংবা ভেতরে আলোচনাতেও দুপক্ষ ভালো বলেই জানা যাচ্ছে। আমরাও মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো সব সময়ই দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণ বিবেচনা করেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বা ভাঙচুরের রাজনীতি অনাকাঙ্ক্ষিত। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেবে_এমন এক প্রশ্নের জবাবে বেগম খালেদা জিয়া মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তাঁরা সবার আগে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন। আমরাও তাই চাই।
অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে উন্নয়নের আশাব্যঞ্জক গতি সঞ্চারিত হয়েছে। রাজনীতিতে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা এই গতিকে ব্যাহত করতে পারে। তাই বিগত কয়েক মাসের রাজনীতি দেখে দেশের মানুষ অনেকটাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। আন্দোলনের নামে রাজপথে সহিংসতা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি প্রদান ক্রমে এক ধরনের অস্থিতিশীলতাকে উসকে দিচ্ছিল। তাই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অন্তত সরকারি ও প্রধান বিরোধী দলের মতৈক্য দেশের কল্যাণে অত্যন্ত জরুরি। আর সেজন্য গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার সংসদ বর্জনের যে বাজে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা সবার আগে দূর করতে হবে। তা না হলে জাতীয় ঐক্য কেবল কথার কথাই থেকে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.