মত ও মন্তব্য-মনমোহন সিং আসছেন সম্পর্কের নতুন ইতিহাস গড়তে by হারুন হাবীব

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং তাঁর বহুল আলোচিত ঢাকা সফরে আসছেন আজ। সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া পাঁচটি রাজ্য, অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন (অবশ্য শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। অতএব সফরটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা যে কেউ-ই অনুভব করতে পারবেন।


১৯৯৯ সালে ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস চালু করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সেদিনকার মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় প্রয়াত জ্যোতি বসু। আজ ১২ বছর পর ঢাকায় আসছেন আরেকজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরেক ঐতিহাসিক বাস্তবতায়।
আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন মহাজোট ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। কাজেই মনমোহন সিংয়ের সফর নিয়ে তারা দৃঢ়চিত্ত এবং আশাবাদী। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নেতারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বা তাদের ধর্মীয় মৌলবাদী সহযোগীরা অনেকটাই সংকটে আছে বলে মনে হচ্ছে। মনমোহন সিংয়ের সফরকে প্রথাগতভাবে স্বাগত জানালেও নিজেদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির স্বার্থ বিবেচনায় তারা কৌশলী ভূমিকা নিতে সচেষ্ট হয়েছে। একদিকে তারা ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষর করা সাম্প্রতিক চুক্তিগুলোর বিরোধিতা করেছে, অন্যদিকে স্বাক্ষরের আগেই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো পার্লামেন্টে উপস্থাপন করার দাবি জানিয়েছে। তবে চুক্তিগুলো পার্লামেন্টে পেশ করা হলে তারা যে পার্লামেন্টে ফিরবে, এর কোনো ঘোষণা দেয়নি। ভারত-বাংলাদেশের রয়েছে চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লাগোয়া সীমান্ত, যা প্রাকৃতিকভাবে দেশ দুটিকে অবিচ্ছেদ্য করে রেখেছে। এ ছাড়া আছে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন, যা একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ বা তাঁদের দোসররা না চাইলেও অনস্বীকার্য। এর পরও আছে আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, যা দুই দেশের রক্তমাখা যৌথ ইতিহাস। কাজেই আমার বিশ্বাস, বাস্তবতার নিরিখেই দুই দেশের কর্ণধাররা দীর্ঘলালিত অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব পেরিয়ে এমন এক নতুন সম্পর্কের বাতাবরণে দুই দেশকে বাঁধতে উদ্যোগী হয়েছেন_আমি আশা করি, সে সম্পর্ক দুই দেশই সযতনে লালন করবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ভারত-বাংলাদেশের সৌহার্দ্য মাত্র সাড়ে তিন বছর টিকে ছিল। এ সম্পর্কে ফাটল ধরানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। সে সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংয়ের রাজনৈতিক বিচক্ষণতায়। নবপর্যায়ের এ সম্পর্কের ভিত স্থাপিত হয়েছে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিলি্ল সফরের মধ্য দিয়ে। এরপর ১৮ মাস ধরে দুই দেশ নানা শাখায় এ সম্পর্ক ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছে, নানা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধানে দুই দেশ এই প্রথমবারের মতো অভিন্ন মত পোষণ করেছে। আমি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সেই রাজনীতিবিদদের শুভেচ্ছা জানাই, যাঁরা ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবার দৃঢ়চিত্তে দুই পড়শির মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের ভিত স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। একই সঙ্গে এ আশাবাদ ব্যক্ত করি, সে সম্পর্কের এ ভিত যেন গভীরে প্রোথিত হয় দুই দেশের গণমানুষের স্বার্থে, আঞ্চলিক শান্তি ও সৌহার্দ্যের স্বার্থে; সমঝোতা ও পারস্পরিক উন্নয়নের স্বার্থে এ সম্পর্ক যেন দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সৌহার্দ্যের নতুন বাতাবরণ তৈরি করে। ড. মনমোহন সিংয়ের সেপ্টেম্বর ৬ ও ৭-এর ঢাকা সফর নানা কারণেই ঐতিহাসিক গুরুত্বের দাবি রাখে। বহুল আলোচিত সফরটির প্রস্তুতিতে কয়েক মাস ধরে ভারতের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং শীর্ষ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ সফর করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা এবং সবশেষে সফরসূচি চূড়ান্ত করতে ঢাকা এসেছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন কংগ্রেস সভানেত্রী ও ক্ষমতাসীন ইউপিএর প্রধান সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়া গান্ধী এসেছিলেন একটি সেমিনারে অংশ নিতে এবং তাঁর শাশুড়ি এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করতে। এর পরও বলব, ভারতের ক্ষমতাসীন জোটের মুখ্য নেত্রীর সফর দুই দেশের নতুন সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে একটি বাড়তি আয়োজন। ঐতিহাসিক কারণেই আমি বিশ্বাস করি, ১৯৭১ সাল ভারত ও বাংলাদেশের এমন একটি অধ্যায়, যা রক্ত দিয়ে আঁকা। এ সম্পর্ক যেমন অবহেলার নয়, তেমনি ভুলে যাওয়ার নয়। বরং এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হলেই তা হবে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া। ভূখণ্ডগত নৈকট্য এবং সমৃদ্ধ অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যে ভারতের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিছু বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ জটিলতা আছে। আছে স্থল ও সমুদ্র সীমানা সংকট, যৌথ নদীর পানি বণ্টন, ১৬২টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ এবং অপদখলীয় জমি হস্তান্তরের বিষয়। দুই দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থেই এগুলোর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। আশার কথা, ড. মনমোহন সিংয়ের সফর উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সমাধান খোঁজার ইতিবাচক লক্ষণ ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথমবারের মতো সীমান্ত মানচিত্র চূড়ান্ত হয়েছে। জানতে পেরেছি, প্রায় প্রতিটি সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যাতে অনেক আশাজাগানিয়া এ সম্পর্ক স্থায়ী রূপ লাভ করে এবং গোটা অঞ্চলে উদাহরণ হিসেবে গৃহীত হয়।
নয়াদিলি্লতে স্বাক্ষর করা মনমোহন-হাসিনা যৌথ ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে দুই দেশ ইতিমধ্যেই বেশ খানিকটা এগিয়েছে। বিনিয়োগ সুরক্ষা, ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাক ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে বাংলাদেশের স্থলবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত, বর্ডার হাট পুনরারম্ভ, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে নয়াদিলি্ল ইতিমধ্যেই বিএসএফকে শক্ত নির্দেশ দিয়েছে, যাতে আর কোনো অসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা না হয়। স্মরণ রাখা উচিত, সীমান্ত হত্যা কেবল সীমান্ত উত্তেজনাই জিইয়ে রাখে না, দুই দেশের জনজীবনেও বিস্তর প্রভাব ফেলে। বাস্তবতা হচ্ছে এই_কিছু ব্যতিক্রম বাদে সীমান্তের অবৈধ পথে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের বেশির ভাগই অতিসাধারণ মানুষ। আইন ভাঙার শাস্তি দিতে কেউ দ্বিমত করবেন না, আইন প্রয়োগ হবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে_এটিই কাম্য। ট্রানজিট 'করিডর' ব্যবস্থা নয়। এটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয় নয়। এর পরও একে রাজনীতির বিষয় বানিয়ে সস্তা ফায়দা লোটার চেষ্টা অব্যাহত আছে। বিষয়টি নিয়ে পুরনো মানসিকতা বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ যাঁরা ঘটাতে চান, তাঁদের উপেক্ষা করেই সামনের দিকে এগোতে হবে। তবে দুই পড়শির অর্থনৈতিক সহযোগিতা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করতে হলে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধাগুলোর অবশ্যই সুষম বণ্টন প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট সুবিধার বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিষয় বলে গ্রহণ করে না। কারণ, তারা বিলক্ষণ জানে, প্রতিবেশীর সঙ্গে নেতিবাচক সম্পর্কে কেউ লাভবান হয় না। অবশ্য তারা এটিও মনেপ্রাণে কামনা করে যে বৃহৎ দেশ এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র হিসেবে ভারত অবশ্যই তার নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থান এবং দুর্বল অর্থনীতির দিকে খেয়াল রাখবে। একটি কথা জোর দিয়ে বলতে চাই_গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল এবং অর্থনীতিতে সবল বাংলাদেশ কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতের জন্যও মঙ্গলজনক।
সম্প্রতি ট্রানজিট নিয়ে ঐতিহাসিক কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। তিনি বলেছেন, ১৯৪৭ সালের পর ভারত ও সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে রেল, নৌ ও স্থলপথে বাণিজ্যিক যাতায়াত অব্যাহত ছিল। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর পাকিস্তান সরকার সে সম্পর্ক স্থগিত করে। এরপর ১৯৭৪ সালের বাণিজ্যচুক্তিতে আগেকার ট্রানজিট-ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়। কাজেই ড. রিজভী মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট-ব্যবস্থাকে সচল করতে প্রয়োজন কেবল দুই দেশের একটি 'প্রটোকল' সই করা ও 'ফ্রেমওয়ার্ক' চুক্তি স্বাক্ষর করা। ট্রানজিট, যত দূর জেনেছি, কেবলই দ্বিপক্ষীয় হচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের মাটি দিয়ে বাণিজ্য সুবিধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রানজিটে বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিমাণ লাভবান হবে, এতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের উন্নতি ঘটবে, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়ে যাবে এবং ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগ বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পরিবহন সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি এখানে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসামসহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার প্রধান আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। কাজেই সত্যতার দাবিতেই, ঐতিহাসিক ঋণ পরিশোধের দায় থেকেও সে অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশকে। মনে রাখতে হবে, নিছক ভারত-বিরোধিতার নামে যাঁরা রাজনীতি করার দুরভিসন্ধি আঁটেন, তাঁরা তাঁদের প্রচারণা বাদ দেবেন না। দুই দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে সে কারণে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বন্ধুত্ব ও সমঝোতার দাবিকে সমুন্নত করতে নেতিবাচক প্রচারণাকে অসার প্রমাণিত করতে হবে। কেননা, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম।
দুই দেশের সংকটগুলো যার আজও মীমাংসা হয়নি, এর অনেকই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের হাতে তৈরি। অতএব সময়ের, আধুনিকতার দাবিতে সামনে এগোনোর মানসিকতা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এ বিশ্বাস রাখতে চাই যে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন, পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, অমীমাংসিত সীমান্ত সুরাহা, তিন বিঘা করিডরের ব্যবহার ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় দুই প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। সময়ের দাবি হচ্ছে, দুই দেশের এই রাজনৈতিক মতৈক্যকে দৃঢ়চিত্তে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই একাত্তরের পর এই প্রথমবার যে সম্পর্ক তৈরি হতে যাচ্ছে, তাকে টেকসই করতে হবে; সম্ভাব্য প্রতিটি বিষয়ে সাহস ও যোগ্যতা দেখাতে হবে। সর্বান্তকরণে আশা করি, ড. সিংয়ের সফর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন ঐতিহাসিক মাত্রার পথ সুগম করুক। দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থানই স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, একসঙ্গে কাজ করা ছাড়া তাদের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবেশী হিসেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া এবং সৎ প্রতিবেশীর আচরণ ছাড়া দুই প্রতিবেশীর পক্ষে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ভারত বড় দেশ ও বড় অর্থনীতি। কাজেই তার বড় ভূমিকা প্রত্যাশা করা অসংগত হবে না। '৪৭-এর পর থেকে বিভক্ত উপমহাদেশ দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িত। কাশ্মীর সংকট আজও জিয়ানো আছে। অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন ও সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তান ক্রমান্বয়েই বিপন্ন দেশে পরিণত হচ্ছে। কোনো সুবাতাস নেই দক্ষিণ এশিয়ায়। কাজেই ড. মনমোহন সিংয়ের সফর নতুন আলো দেখাবে_এ আশাই রাখি।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
hh1971@gmail. Com

No comments

Powered by Blogger.