সময়ের কথা-ইতিহাসের শেকড় সন্ধান ও শুভেচ্ছা দূত by অজয় দাশগুপ্ত

দুই দেশের সম্পর্কের শেকড় ইতিহাসে প্রোথিত। আবার এ ইতিহাসেই রয়েছে হিংসা-দ্বেষ-উদ্বেগ। এর মূল উপড়ে ফেলা সহজ নয়। তবে চেষ্টা চালালে ফল মিলবেই। ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার যথার্থভাবেই বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশকে যেমন এ সুবিধা বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে, তেমনি ভারতকেও তা বিবেচনায় রাখতে হবে
মাত্র দশ বছর বয়সে জন্মস্থান বরিশালের গৌরনদী থানার কালুপাড়া গ্রামের (গৈলা নামেই এর পরিচিতি) দাশের বাড়ির বড় হিস্যা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সে বড় অস্থির সময় ছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফিরে আসছে স্বাধীনতা। দুটি স্বাধীন দেশ হবে_ পাকিস্তান ও ভারত। কিন্তু মুখে মুখে সে বারতা গেছে রটে_ 'মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান এবং হিন্দুদের জন্য ভারত।' এ ভূখণ্ডে আরও অনেক ধর্মের অনুসারী ছিল। তাদের প্রসঙ্গ আদৌ আসেনি। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতার পরের কয়েকটি বছর চলল হিংসা-বিদ্বেষ-সংঘাত এবং ব্যাপক দেশান্তর_ হিন্দুরা যাচ্ছে ভারতে, মুসলমানরা পাকিস্তানে। এটাই যেন নিয়তি। সবাই এটা করেছেন, তা নয়। কিন্তু মূল প্রবণতা ছিল সহায়-সম্পত্তি আর চিরচেনা মানুষ ও পরিবেশ ফেলে অজানার পথে পা বাড়ানো। তাতে কত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে, কত সম্ভাবনা হারিয়ে গেছে, কত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে! বিশ্বনাথ দাশগুপ্তের ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটি ঘটেনি। তিনি জন্মভিটা ছাড়ার পরও জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। এখন পঁচাত্তর বছর বয়সেও সক্রিয়-কর্মচঞ্চল। নানা এলাকা ঘুরেছেন, কেবল শৈশবের গ্রামটিতেই আর আসা হয়নি। কয়েকদিন আগে তার মেয়ে ফাল্গুনী এসেছেন এ গ্রামে ক্লাস সিক্সে পড়া কন্যা সৃষ্টিকে সঙ্গী করে। ফাল্গুনীর হাতে ছিল বাবার নিজের হাতে তৈরি করে দেওয়া নকশা, যাতে গৈলা স্কুল থেকে শুরু করে লোহার সেতু, খাল, বাজার, বাড়ির পাশের দীঘি, মন্দির, আটচালা পার হয়ে কীভাবে 'নিজেদের ঘরে' পেঁৗছাতে হবে_ সবকিছু নিখুঁতভাবে এঁকে দেওয়া। দশ বছর বয়সে যে এলাকা তিনি ছেড়েছেন, তার অবিকল চিত্রই তিনি এঁকেছেন। শীতের দেশের অনেক পাখি আমাদের বাংলাদেশে প্রতি বছর আসে এবং গরম শুরু হলে নির্ভুল পথে ফিরে যায় স্ব-স্থানে। অনেক মাছ মহাসাগর পাড়ি দেয় এবং নতুন স্থানে ডিম ছাড়ার পর তাদের জীবনের অবসান ঘটে। সেই ডিম থেকে যে মাছের জন্ম তারা মায়ের আসা পথ অবিকল অনুসরণ করে ফিরে যায় স্ব-স্থানে। বিশ্বনাথ দাশগুপ্তের দশ বছর বয়সের 'নিজ গ্রামে'র স্মৃতি পঁচাত্তর বছর বয়সে হুবহু মনে রাখা যেন তেমনই কিছু। তার মেয়ে ও নাতনির বিস্ময় আর কাটে না_ সবকিছু যেন আগের মতোই। মানুষের ভালোবাসায় তারা সিক্ত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে 'জন্মস্থানে' ফিরে আত্মীয়স্বজনের কাছে বলার মতো পেয়েছেন অনেক আনন্দ-স্মৃতি। বাবার যে 'দেশের জন্য' কেন এত টান, সেটাও বুঝে গেছেন। বাড়ির মন্দিরগুলো সযত্নে রক্ষিত এবং সেখানে প্রতিদিন পূজা হয়_ এটা দেখা ছিল তাদের জন্য পরম সন্তুষ্টির।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বিশ্বনাথ দাশগুপ্তের মতো স্মৃতিকাতর অনেক নারী-পুরুষের সাক্ষাৎ মিলবে, যারা জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কিন্তু ক্ষণিকের জন্যও তা ভুলতে পারছেন না। এখন ১৯৪৭ সালের ধর্মান্ধতার পরিবেশ কোনো দেশেই তেমন নেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়ও কমেছে। একে অপরের দেশে যাওয়ার ঘটনা অনেক বেড়েছে। কমছে ভয়ভীতি। তারপরও যাতায়াত-যোগাযোগ সহজ করার জন্য অনেক কিছু করার রয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ সমস্যা হয়ে আছে কুখ্যাত অর্পিত সম্পত্তি আইন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে এ আইন জারি করে, যার সে সময়ে নাম ছিল শত্রু সম্পত্তি আইন। দেশের একদল নাগরিককে 'শত্রু' আখ্যা দেওয়া মানবাধিকারের নির্লজ্জ লঙ্ঘন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাড়ে চার দশক ধরেই তা বহাল রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ইংল্যান্ড বা নিউইয়র্কে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো শহরে দশকের পর দশক ধরে বসবাস করলেও দেশে তার সম্পত্তির মালিকানা চলে যায় না। কিন্তু ভারতে থাকার অভিযোগে এটা ঘটেছে এবং তার শিকার হাজার হাজার পরিবার। এমনকি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন_ এমন ব্যক্তির সম্পত্তিও সরকার উত্তরাধিকারদের হাতে তুলে না দিয়ে তাকে 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে ঘোষণা করে নিজের দখলে নিয়ে কাউকে লিজ দিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রজিৎ মিত্র শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশে অবস্থানকালের সুখস্মৃতি এবং সবচেয়ে তিক্ত স্মৃতি কী? প্রথম প্রশ্নে বলেছেন, চমৎকার আনন্দ-অনুভূতি নিয়ে যাচ্ছেন। দুই বছরেরও কম সময় ঢাকা অবস্থানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে ভারত সফর করেছেন। ফিরতি সফরে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। ভারতের অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও উপদেষ্টা এ সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় প্রভৃতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এসেছেন। বাংলাদেশের মন্ত্রী-উপদেষ্টারাও গেছেন ভারতে। তার বিবেচনায়, ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনকে সাফল্যের শীর্ষের দিকে রাখা যায়। ট্রানজিট, ভিসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, তিস্তার পানি বণ্টন_ নানা বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেন। বাংলাদেশে ভারতের যত পণ্য আসে, সে তুলনায় বাংলাদেশের পণ্য অনেক কম যায়_ সে প্রশ্ন প্রতিনিয়ত উঠছে। তিনি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য ব্যবধান পুরোপুরি ঘোচানো যাবে না। কারণ বাংলাদেশ ভারত থেকে অনেক ধরনের শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিন আমদানি করে, যা থেকে তৈরি পণ্য অন্য দেশে রফতানি করা হয়। খাদ্যদ্রব্যও আমদানি হয়। তবে ভারতে বাংলাদেশের রয়েছে বড় বাজার এবং তার বিপুল চাহিদা মেটানোর জন্য এখানে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টির প্রতি তিনি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ বিনিয়োগ এককভাবে হতে পারে, যৌথভাবেও হতে পারে। যে কোনো দেশেই বিনিয়োগের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য শর্ত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের জন্যও বাংলাদেশের নাগরিকরা এ বিষয়টির প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কা বোধ করবেনই। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ কিংবা ভারতে বা অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের জন্যও চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। তবে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এখন পর্যন্ত তেমন 'আন্তর্জাতিক' হয়ে উঠতে পারেননি, যেমনটি ঘটছে ভারতের অনেক শিল্পপতির ক্ষেত্রে। এখানে টাটা গোষ্ঠী বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে, যা কিছুদূর এগিয়ে থমকে গেছে গ্যাস সংকটের ইস্যুটি বড় হয়ে ওঠায়।
আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় প্রভৃতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের উন্নতির জন্য ভারত বাংলাদেশের সহায়তা চাইছে। রজিৎ মিত্র বলেছেন, বাংলাদেশে ভারতীয় পুঁজিপতিরা বিনিয়োগ করলে সেখানে উৎপাদিত পণ্য এসব রাজ্যে রফতানি করা যায়। তিনি ট্রানজিট প্রসঙ্গও তোলেন এবং বলেন, এটা সবার জন্য লাভজনক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে ভারতের অবস্থানে মিল-অমিল দুই-ই রয়েছে। বাংলাদেশের তরফে একটি যুক্তি হচ্ছে_ ট্রানজিট সুবিধা পেলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠানোর ব্যয় অনেক কমে যাবে। আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের কাঠ এবং আরও অনেক ধরনের পণ্য সহজে যাবে ভারতের অন্যান্য প্রদেশে। এর ফলে তাদের সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হবে। ভারতের উচিত তার সাশ্রয় হওয়া অর্থের একটি অংশ বাংলাদেশকে দেওয়া। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার মুচকুন্দ দুবে সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রানজিট সুবিধা কাজে লাগাতে হলে ভারতের উচিত বাংলাদেশের অবকাঠামো সুবিধা উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করা এবং এ কাজে আমলাতান্ত্রিক কিংবা অন্য কোনো ধরনের গড়িমসি অগ্রহণযোগ্য। তিনি বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও এর সামান্যই ছাড় করা হয়েছে। চীন এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলে তারা এ সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ ব্যয় করে ফেলত। রজিৎ মিত্রের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রসঙ্গ তোলা হলে তিনি দাবি করেন, এ প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। একই সঙ্গে এটাও বলেন যে, ১০০ কোটি ডলার ঋণের বাইরেও আরও নানা খাতে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে। জমে থাকা অনেক সমস্যা সমাধানে যেমন দুটি দেশ সক্রিয় হয়েছে, তেমনি নতুন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্মসূচিও বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বাংলাদেশের নদ-নদীতে ড্রেজিং এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে এটাও বলা দরকার, ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর বর্তমানে বাংলাদেশের জনমনে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে যা যা করা দরকার সেটা করছে না এবং সেটা চায়ও না। মুচকুন্দ দুবে যেমন বলেছেন, ভারতকে অবশ্যই তার পুরো বাজার বাংলাদেশের জন্য খুলে দিতে হবে এবং এ ঘোষণা মনমোহন সিংয়ের সফরের সময়েই আসা উচিত ছিল। এটাও মনে রাখা দরকার, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। সময়ের কাজ সময়ে করা চাই। মনমোহন সিংয়ের সফর ছিল অনেক প্রত্যাশার। এমনও বলা হচ্ছিল যে, তিনি ঢাকা অবস্থানকালে এমন কিছু ঘোষণা দেবেন, যা মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কিন্তু তিস্তার জল যে আরও ঘোলা হয়ে গেল!
বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন শ'খানেক পাথরবাহী ট্রাক যায় ভারতের আগরতলায়। এসব পাথর আসে সিলেট থেকে। সিলেটে প্রচুর পাথর পাওয়া যায় এবং তার একটি অংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয়। আরেকটি অংশ ভারতের ত্রিপুরায় রফতানি হয়। মেঘালয় ও আসাম থেকেও বাংলাদেশে পাথর আমদানি করা হয় এবং তার একটি অংশও ত্রিপুরায় রফতানি করা হয়। এ পাথর আমদানির পর তা ভাঙা হয়। এতে মূল্য সংযোজন থাকে যথেষ্ট। যে পাথর প্রতি টন ১০ ডলারে আমদানি করা হয়, তা রফতানি হয় প্রায় ২৫ ডলারে। এ পাথর বহন করা হয় বাংলাদেশের ট্রাকে। পাথর ভাঙা এবং আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া ও পরিবহনের জন্য শত শত বাংলাদেশি শ্রমিকের কাজ মেলে। এর পরিবর্তে যদি ট্রানজিটের সুযোগে ভারত থেকে পাথর বহন করা ট্রাক বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতে চলে যায় সামান্য ট্রানজিট ফি দিয়ে, তেমন অ্যারেঞ্জমেন্টে বাংলাদেশের আগ্রহ কম থাকাই স্বাভাবিক। ভারতের নীতিনির্ধারকদের এ বাস্তবতা অবশ্যই বিবেচনায় রাখা চাই।
দুই দেশের সম্পর্কের শেকড় ইতিহাসে প্রোথিত। আবার এ ইতিহাসেই রয়েছে হিংসা-দ্বেষ-উদ্বেগ। এর মূল উপড়ে ফেলা সহজ নয়। তবে চেষ্টা চালালে ফল মিলবেই। ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার যথার্থভাবেই বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশকে যেমন এ সুবিধা বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে, তেমনি ভারতকেও তা বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের সুবিধা আছে কিন্তু 'পাছে লোকে কিছু বলে' কিংবা 'কী জানি কখন কী হয়' ভেবে শঙ্কিত হয়ে চলার কোনো মানে নেই। বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের হয়ে কথা বলার মতো অনেক অনেক মানুষ রয়েছে অনেক দেশে। যেমন অনেকে বলেছে একাত্তরে। পাকিস্তান এবং সে দেশের হিংস্র-বর্বর সামরিক জান্তা চেয়েছিল তাদের নিষ্ঠুর গণহত্যা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেও যেন নীরব থাকে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। এখন পরিস্থিতি আরও আমাদের অনকূলে। চার দশকে বাংলাদেশ বিশ্বে নিজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিতে পেরেছে। এর পেছনে মূল কাজ করেছে স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেদের বিকশিত করার ক্ষমতা। এমন একটি দেশ পরাভব মানবে না।
দশ বছরের এক বালকের স্মৃতিশক্তির প্রসঙ্গ শুরুতে উল্লেখ করেছি। ৬৫ বছর ধরে তিনি নির্ভুলভাবে তা লালন করে চলেছেন। তার আবেগে কোনো সংকীর্ণ স্বার্থ নেই। তিনি বা তার উত্তরাধিকাররা ফেলে যাওয়া সম্পত্তিও ফেরত চান না। এ ধরনের আরও অনেক অনেক মানুষ রয়েছেন উভয় দেশেই, যাদের আবেগের মূল্য দেওয়া হলে বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে এবং তাতে সব দেশই আরও নানাভাবে লাভবান হতে পারে। অর্থনীতিতেও পড়বে তার প্রভাব। এ ধরনের মানুষও কিন্তু চমৎকার শুভেচ্ছা দূত!

অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.