পবিত্র কোরআনের আলো-জালিম জাতি ছাড়া অন্যরা আল্লাহর গজবে নিপতিত হয় না

৪. ফালাম্মা নাছূ মা যুক্কিরূ বিহী ফাতাহ্না আ'লাইহিম আবওয়াবা কুলি্ল শাইয়িন হাত্তা ইযা ফারিহূ বিমা ঊতূ আখাযনা-হুম বাগ্তাতান ফায়িযা হুম্ মুবলিছূন। ৪৫. ফাক্বুতি্বআ' দা-বিরুল ক্বাওমিল্লাযীনা যালামূ ওয়ালহামদু লিল্লা-হি রাবি্বল আ'লা-মীন। ৪৬. ক্বুল আরাআইতুম ইন আখাযাল্লা-হু ছামআ'কুম ওয়া আবসা-রাকুম ওয়া খাতামা আ'লা ক্বুলূবিকুম্ মান ইলা-হুন গাইরুল্লা-হি ইয়া'তীকুম্ বিহী; উনযুর কাইফা নুসার্রিফুল আয়াতি ছুম্মা হুম ইয়াসদিফূন।


৪৭. ক্বুল আরাআইতাকুম ইন আতা-কুম আ'যা-বুল্লা-হি বাগ্তাতান আও জাহরাতান হাল ইউহ্লাকু ইল্লাল ক্বাওমুয্ যা-লিমূন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৪৪-৪৭]
অনুবাদ
৪৪. অতঃপর তারা যখন সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদের বারবার স্মরণ করানো হচ্ছিল। তার পরও আমি তাদের ওপর সৌভাগ্যের সব দুয়ারই খুলে দিলাম। শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাতেই মত্ত হয়ে গেল, যা তাদের দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করে নিলাম। ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়ল।
৪৫. এভাবেই অত্যাচারী জাতিগুলোর দর্প চূর্ণ করে দেওয়া হয়েছিল। আর সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তামাম সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
৪৬. (হে রাসুল!) আপনি তাদের বলুন, তোমরা কি এ কথা ভেবে দেখেছ, যদি আল্লাহ তায়ালা কখনো তোমাদের শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন, তখন আল্লাহ ছাড়া এমন আর কোনো প্রভু আছেন যিনি এসব ফিরিয়ে দিতে পারেন? লক্ষ করো, কিভাবে আমি আমার আয়াতগুলো খুলে খুুলে বর্ণনা করছি। এর পরও কিন্তু এরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
৪৭. আপনি বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি কখনো অকস্মাৎ বা অবহিতভাবে আল্লাহর দেওয়া শাস্তি তোমাদের ওপর নিপতিত হয় তখন জালিম জাতি ছাড়া অন্যদের ধ্বংস করে ফেলা হয় কি?
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে মানুষকে সরল ও সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা যেসব বালা-মুসিবত প্রেরণ করেছেন সে বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ৪৪ নম্বর আয়াতে প্রাচীন যুগের অবাধ্য জাতির প্রকৃৃতি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তিদানের ধরন বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের প্রতি আল্লাহর নবীদের মাধ্যমে যে বাণী পাঠানো হতো, তারা তা খুব দ্রুত ভুলে যেত এবং তাদের মনগড়া অন্যটা করত। এর পরও কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের সামনে সম্ভাবনার সব দুয়ারই খুলে দিতেন। আল্লাহর দেওয়া সৌভাগ্য ও নিয়ামত লাভ করার পর তারা ভোগ-বিলাস ও অহংকারে লিপ্ত হয়ে পড়ত। তারা যখন ঔদ্ধত্যের সীমা লঙ্ঘন করত তখন কখনো কখনো আল্লাহ তায়ালা তাদের পাকড়াও করতেন, অর্থাৎ তাদের ওপর আসমানি বালা-মুসিবত নেমে আসত। আসমানি মুসিবতরূপী আল্লাহর শাস্তি নেমে এলে তারা হতাশ হতো, তবে সংশোধন হতো খুব কম।
৪৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইতিহাসের যেসব ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন সেগুলোর মাধ্যমে কোনো কোনো উদ্ধত জাতিকে সমূলে বিনাশ করে দেওয়া হয়েছিল। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সামাজিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে এসব ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে।
৪৬ নম্বর আয়াতে অবাধ্য ও পথভ্রষ্টদের কাছে আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে একটি মোক্ষম যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্মগতভাবে যে সম্পদ ও সৌভাগ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলো যদি তিনি কেড়ে নেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ পারবে কি সেগুলো ফিরিয়ে দিতে? পারবে না, সেগুলো একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তিনি যদি কারো শ্রবণ শক্তি কেড়ে নেন, দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন অথবা অন্তরের শক্তি কেড়ে নেন, তবে অন্য কেউ তা ফিরিয়ে দিতে পারবে না; কারণ এগুলো আল্লাহর হাতে।
৪৭ নম্বর আয়াতে শান্তিবাদী সৎ মানুষদের অভয় দিয়ে জানান দেওয়া হয়েছে যে আল্লাহর গজব হিসেবে যে শাস্তি মানুষের কাছে আসে, তা শুধু জালিম জাতির ওপরই নিপতিত হয়। অতীতে শুধু অবাধ্য ও জালিম জাতিকেই এভাবে ধ্বংস করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আল্লাহর গজবের শাস্তি শুধু জালিমদের ওপরই নিপতিত হবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.