চরাচর-শীতলক্ষ্যার অস্তিত্ব সংকট by আজিজুর রহমান

ক্রমবর্ধমান দূষণ আর নাব্যতা সংকটের কারণে এক কালের প্রাণচাঞ্চল্য জাগানিয়া খরস্রোতা শীতলক্ষ্যার অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। আশঙ্কাজনকভাবে নাব্যতা কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যে নদীর অর্ধেক পথ নৌযান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর দূষণের কারণে সৃষ্টি হয়েছে নদীর তীরবর্তী জনপদগুলোতে স্বাস্থ্য সমস্যা ও নানাবিধ সংকট।


শীতলক্ষ্যার তীরে বসবাসকারী মানুষের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি, নদীতে শিল্প ও মানববর্জ্য নিক্ষেপ, নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ড্রেজিং না করা ইত্যাদি কারণে শীতলক্ষ্যার এই করুণ পরিণতি। উজান উৎসমুখ ময়মনসিংহের টোক-কর্মীর আদি ব্রহ্মপুত্র থেকে মুন্সীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা-মেঘনা সঙ্গমস্থল পর্যন্ত শীতলক্ষ্যার দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার। উজানে পলি ভরাট হয়ে নদীটির অর্ধেকই মরে গেছে। ঘোড়াশাল থেকে উজানে উৎসমুখ আদি ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত অর্ধেক, ৫৩ কিলোমিটার, নৌপথ শুকনো মৌসুমে নাব্যতা হারিয়ে প্রায় বিলীন হয়ে যায়। তবে ভাটিতে শীতলক্ষ্যা-মেঘনা সঙ্গমস্থল থেকে শীতলক্ষ্যা ব্রিজ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নৌপথ মোটামুটি সারা বছর জাহাজ চলাচলের উপযোগী থাকে। অন্যদিকে চর সৈয়দপুর থেকে ঘোড়াশাল পর্যন্ত নদীর দুই তীরে প্রায় তিন হাজার শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার বর্জ্য নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে নদীতে। এ ছাড়া ডিএনডি বাঁধ এলাকার কয়েক হাজার শিল্প-কারখানার বর্জ্য সিদ্ধিরগঞ্জ পাম্প হাউসের মাধ্যমে বিরামহীনভাবে শীতলক্ষ্যায় ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ডায়িং কারখানাই রয়েছে চার শতাধিক। নারায়ণগঞ্জ শহর, বন্দর এলাকা ও আশপাশের বর্জ্য তো মিশছেই। রাজধানী ঢাকার একাংশের বর্জ্যও মিশছে শীতলক্ষ্যায়। ঢাকার বর্জ্য বাড্ডা দিয়ে ফেলা হচ্ছে বালু নদীতে। বালু নদী দিয়ে সেই বর্জ্য রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় এসে পড়ছে। বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত বর্জ্যের ভারে ক্লেদাক্ত, দুই তীরে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্প-কারখানা, ক্রমবর্ধমান জনবসতি, অপরিকল্পিত বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণসহ অবৈধ দখলকবলিত হয়ে ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে নদী-প্রস্থ। যথেচ্ছ বর্জ্য আর বছর বছর পলি পড়ে ভরাট হয়েছে নদীর তলদেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ, নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর অর্থনৈতিক জীবনপ্রবাহ সচল রাখতে শীতলক্ষ্যাকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে নদী বাঁচানোর দায় সবার।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.