ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র-পলায়নে মুক্তি খোঁজা কেন?

দেশের ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখন প্রায় ভবঘুরেশূন্য। পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচ হাজার ভবঘুরে এসব কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গেছে। একসময় যারা ভবঘুরে কেন্দ্রে আশ্রয় পেয়ে নিজেদের নিরাপদ ভেবেছে, তারা কিছুদিন যেতে না যেতেই নিজেদের বন্দি মনে করতে শুরু করে কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা কি খোঁজার চেষ্টা করেছেন? প্রকৃতপক্ষে নিম্নমানের খাবার, নামকাওয়াস্তে পোশাক ও কিছু উপকরণের ব্যবস্থা করেই দায়িত্ব সম্পন্ন করার পরিণতি এই পালিয়ে যাওয়া।


সেই ব্রিটিশ ভারতের আইন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। ফলে ভিক্ষাবৃত্তি ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং নাগরিক বিড়ম্বনা সৃষ্টিকারী কাজে নিয়োজিতদের ধরে এনে আশ্রয়কেন্দ্রের নামে একধরনের বন্দিশালায় আটকে রাখার মধ্যেই সমাজসেবা অধিদফতর তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের মহত্ত্ব খোঁজে। গত শনিবার এ সম্পর্কিত সমকালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, সঠিক পরিচর্যার অভাব, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ভবঘুরে কেন্দ্রগুলো থেকে ভবঘুরেরা পালিয়ে গেছে। মানিকগঞ্জ ভবঘুরে কেন্দ্র থেকে ভবঘুরেরা পালাতে পালাতে এখন সাকল্যে সেখানে ছয়জন রয়েছে। অথচ একই আশ্রয়কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে সরকারি কর্মীর সংখ্যা ১৭। ভবঘুরেদের আদ্যোপান্ত জেনে তাদের শারীরিক, মানসিক পরিচর্যার দরকার হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মীরা তেমন কিছুই করেন না। কিছু করার জন্য আইনের বাধ্যবাধকতাও নেই। সে কারণে এ সম্পর্কিত আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। এরপর আসে খাবারসহ অন্যান্য সেবার মান উন্নত করার বিষয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানে দুর্নীতির মহোৎসব চলে, সেখানে এসব আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতরা রাতারাতি সবাই অ্যাঞ্জেল বনে যাবেন_ এটা মনে করার কারণ নেই। তাই দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে রাখার বন্দোবস্ত চাই। ভবঘুরে মানুষকে কীভাবে সমাজে আবার সুস্থ ও মানবিক গুণসম্পন্ন করে পুনর্বাসন করা যাবে_ তারও যথাযথ পরিকল্পনা থাকা চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.