সৈয়দ নুরুজ্জামান-হাসিনা মান জায়েগি

০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের নেত্রী হিসেবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনা যখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তখন তিনি বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন তিনি সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে বিভিন্ন মহল, এমনকি তাঁর দলের একটি অংশের ভেতর থেকেও বেশ চাপের মুখে রয়েছেন।


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট রাস্তায় আন্দোলনে নেমে আসছে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে। তারা মনে করছে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় ধরনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে খুব একটা সফল হতে পারেনি। অবশ্য একই রকম অভিযোগ ছিল খালেদা জিয়ার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সরকারের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি ছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের। এটি অন্যতম এজেন্ডা বলে মনে করা যেতে পারে। ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করে তুলতে পারে। এই কর্মকাণ্ডের ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব অনেকটা দূর করা যাবে। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দুই দিনের সফরের ওপর যথেষ্ট ভরসা করছেন। দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হবে, তা শুধু নতুন যুগের সূচনা করবে না, বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল করে তুলবে। এই অর্জন হবে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টার ফল। তিনি ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তোলা উচ্চপর্যায়ের কিছু ইনসার্জেন্টের বিষয়ে বাংলাদেশের সম্পর্ককে পাল্টে দেন। তিনি সবার জন্য এই বার্তা ছড়িয়ে দেন যে বাংলাদেশের মাটিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করার দিন শেষ। শেখ হাসিনার জন্য তাঁর দেশবাসীকে এটা বোঝানো মোটেই কষ্টকর হবে না যে ড. মনমোহন সিংয়ের দুই দিন ঢাকা অবস্থান বাংলাদেশকে যথেষ্ট লাভবানই করবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তাঁর শরিকরা, বিশেষ করে ডানপন্থী দলগুলো দুই দেশের মধ্যে গিভ অ্যান্ড টেককে বর্ণনা করতে চাইছেন এই বলে যে বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে যাঁরা ভারত-বাংলাদেশের একটি সুসম্পর্ক দেখতে চান, তাঁরা এসব খুব একটা গায়ে মাখছেন না।
যদি দুই দেশের বিভিন্ন ঐক্যের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বড় ধরনের লাভবান হন, তাহলে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন। হয়তো তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানকে পুরোপুরি পুনর্বহাল করতে পারবেন না, বামপন্থী এবং অসাম্প্রদায়িক শরিকদের দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাতিল করতে পারবেন না। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তিনি সফলভাবে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের মডেলের ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি বিশ্বাস করেন, এই মডেল তাঁর দেশকে স্থিতিশীলতা দিতে পারে। কিন্তু ২০১৩ সালে ভোট কারচুপি করা হবে বলে যে অভিযোগ আছে, সে বিষয়টি তিনি কিভাবে মোকাবিলা করবেন তা এখনো দেখার বিষয় রয়ে গেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারাসহ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের একটি উল্লেখযোগ্য চাপ আছে শেখ হাসিনার ওপর যে বিএনপি এবং ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর সময়ে যেসব অসাম্প্রদায়িকতা, চেতনাবিমুখ বিষয় সংবিধানে ঢোকানো হয়েছে, সেগুলো বাতিল করার। ২০০৮ সালে ফোরাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগের কথা তুলে ধরে ১৯৭১ সালের চেতনাকে পুনর্বহাল করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। এর ফলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৩০টির বেশি আসন পায়নি এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট শক্তিশালী পার্লামেন্টের ২৩৫টি আসন দখল করেছে। সুতরাং তাঁকে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই প্রভাবশালী ফোরামের সিমপ্যাথি হারিয়ে না যায়।
৬৪ বছর বয়সী শেখ হাসিনা আপাতদৃষ্টিতে একটি কঠিন স্রোতের মধ্যে পড়েছেন বলে মনে হলেও তিনি ঠিকই সাঁতরে নিরাপদ কূলে পেঁৗছতে পারবেন। রাজনীতির ময়দানে তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াকে পরাস্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন, এমনকি তাঁকে একবার দুর্নীতির দায়ে কারাগারেও যেতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর বিজয়ের স্পিরিট নষ্ট করা সম্ভব হয়নি। এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পরিবারে তিনি সব সময় রাজনীতি নিয়েই আলোচনা হতে দেখেছেন।
শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাঁর কোনো পার্থক্য নেই। তাঁর অবস্থান এখন কিছুটা নাজুক ক্যাবিনেটের দুর্বলতার কারণে। কিন্তু এখনো তাঁর ভালো কিছু দেখানোর সময় রয়েছে। এখনো পরবর্তী ২০১৩ সালের নির্বাচনের বেশ বাকি।

ভারতের চণ্ডীগড়ের দ্য ট্রিবিউন থেকে ঈষৎ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর-মহসীন হাবিব


No comments

Powered by Blogger.