বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব ধারায় এগোতে হবে-নিরাশার চক্রে জলবায়ু সম্মেলন

ক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে জলবায়ু সম্মেলন শেষ হয়েছে। ফলাফল পর্বতের মূষিক প্রসব: বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামানোর কোনো কার্যকর রূপরেখা এই সম্মেলন দিতে পারেনি। মন্দের ভালো এতটুকুই যে জলবায়ুর বিষ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ সীমিতকারী ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রটোকল তামাদি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া।


সত্যিই বর্ধিত তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই কিয়োটো প্রটোকলই হলো ডুবন্ত মানুষের সামনে একমাত্র খড়কুটো; কিন্তু তা কি পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারবে?
কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলন শুরুতে যত আড়ম্বর ও উচ্চাশা সৃষ্টি করেছিল, শেষ দিনে তা নামিয়ে আনে হতাশা। পরের বছরের মেক্সিকোর কানকুনের সম্মেলনে সেই হতাশা আরও বাড়ে, এ বছরের ডারবান সম্মেলন কেবল তারই পুনরাবৃত্তি ঘটাল। দৃশ্যত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যূপকাষ্ঠে বাদবাকি দুনিয়ার শুভ উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। কোপেনহেগেন থেকে কানকুনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একমত না হওয়া ছিল বড় সমস্যা, ডারবানে তেমনি সমঝোতার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে ভারত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে পৃথিবীর বাসযোগ্য থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আত্মঘাতী পথই অনুসরণ করছে উন্নত ও প্রায়-উন্নত রাষ্ট্রগুলো। মূলত এর জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের ক্রমাগত একগুঁয়েমি। তবে, ডারবান সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল গঠনের কাজ কিছুটা এগিয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে কোনো চুক্তিতে উপনীত না হওয়ায় আগের মতোই বাড়তি এক দিন সময় নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তের এই বাড়তি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোয় একটি বাধ্যতামূলক চুক্তির প্রস্তাব করেছে, পাস হলে যা কার্যকর হবে ২০২০ সাল থেকে। কিন্তু ভারত-চীন-ব্রাজিলের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর জোট ‘বেসিক’ একে তাদের উন্নতির পথে বাধা হিসেবে দেখে আসছে। পাশাপাশি উন্নত ও ধনী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে আশার ফুলঝুরিতে ভাসিয়ে যেনতেন প্রকারের চুক্তি মানানোর চেষ্টাও করেছে। এভাবে কোপেনহেগেন ও কানকুনের পুনরাবৃত্তি বিশ্ববাসীকে হতাশ করবে, আতঙ্কিত করে তুলবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান শিকার সমুদ্রবর্তী বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে। ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষে থাকার স্বীকৃতি দিয়ে কিছু অর্থসাহায্য পাওয়া গেলেও আমাদের বিপন্নতা মোটেই কমবে না। তাই আন্তর্জাতিক উদ্যোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশীয়, আঞ্চলিক এবং দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে এখন মনোযোগী হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.