চিকিৎসা সুবিধা-জন-অধিকার নিশ্চিত হোক

চিকিৎসাসেবা কিংবা সুবিধা নিশ্চিত করার দায় রাষ্ট্রের। এটি নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়নি, সাধারণ মানুষের কাছে তা সহজলভ্য নয়। দেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাসেবায় উন্নত ব্যবস্থা ও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বটে; কিন্তু সে পথ মাড়ানোর সাধ্য সাধারণ মানুষের নেই।


প্রধানমন্ত্রী নিজে এ ব্যাপারে এরই মধ্যে বহুবার চিকিৎসকদের তাঁদের দায় ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও অনেক চিকিৎসকই তা যে আমলে নেননি, বিদ্যমান পরিস্থিতিই এর সাক্ষ্য বহন করছে।
দেশের সর্ববৃহৎ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যালের চিত্র অত্যন্ত বিবর্ণ। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী, পঙ্গু, বক্ষব্যাধি, মিটফোর্ডের অবস্থাও তথৈবচ। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা নেতিবাচক চিত্র গোটা ব্যবস্থাকে যেন চেপে ধরেছে। ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, শয্যা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদ ও তৎপরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিক্যালসহ বড় বড় সরকারি হাসপাতাল যেন অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছিল। এসব বিষয়ে এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যালে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনাও। খোদ রাজধানীর চিত্র এই। বিভাগ, জেলা, উপজেলার চিত্র তো আরো করুণ। জন-অধিকার নিশ্চিত করার দায় যাঁদের কিংবা সেবাই যাঁদের ব্রত, তাঁদের কারো কারো কর্মকাণ্ড এতটাই প্রশ্নবিদ্ধ যে তা মানবতার কলঙ্ক। জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতার পাঠ যেন ক্রমেই চুকে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত অশুভ বলে আমরা মনে করি। চিকিৎসা সুবিধা সহজলভ্য ও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার ব্যাপারে এরই মধ্যে অনেক অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত হয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। চিকিৎসকদের দলবাজি সংক্রান্ত প্রতিবেদনও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশে চিকিৎসাসেবার নামে অনেক ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে রমরমা বাণিজ্য এবং বেশির ভাগ মানুষ খুব অসহায়ভাবে এর শিকার হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানবতাবোধসম্পন্ন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন, যাঁরা এটিকে সেবামূলক পেশা হিসেবেই গ্রহণ করেছেন এবং যথাযথ কর্তব্য পালনে নিষ্ঠাবান। কিন্তু এর পাশাপাশি এ প্রশ্নও দাঁড়ায়, সে সংখ্যা কত?
আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তা অসত্য নয়; কিন্তু যে যে খাতে এই সীমিত সম্পদ থেকেই যতটুকু বরাদ্দ হচ্ছে তার সুষ্ঠু ও যথাযথ ব্যবহার কি হচ্ছে?
চিকিৎসা ক্ষেত্রও এর বাইরে নয়। এসব নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। যে দেশের সিংহভাগ মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় সে দেশের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে সামগ্রিক চিত্র কতটা বিবর্ণ, উদ্বেগজনক ও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন।
মানুষের অধিকার নিয়ে কারো হেলাফেলা করার অবকাশ নেই। স্বাস্থ্যসেবা কিংবা চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে সব কিছু করতে হবে অনেক কিছুর ঊধর্ে্ব ওঠে। মানুষ তার অধিকার সংবিধানের স্বীকৃতি অনুযায়ী ভোগ করতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.