স্বাগত মনমোহন সিং-উন্মোচিত হোক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন আজ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর একদিকে যেমন বহুল প্রতীক্ষিত, তেমনি এই সফরকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী মহলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের ঔৎসুক্য রয়েছে, যা স্বাভাবিক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভারত সফরের সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।


স্বাভাবিকভাবেই মনমোহনের বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর এই সফর উভয় দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এই সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের শুধু নিকটই নয়, বড় প্রতিবেশীও। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। নিকট প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও সীমানা চিহ্নিতকরণ, ছিটমহল বিনিময়, অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তর, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক ধরনের শীতল সম্পর্ক ছিল। শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় সম্পর্কের সে বরফ অনেকটাই গলেছে। মনমোহনের সফরের ভেতর দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে উষ্ণতা ফিরে পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ তিনটি চুক্তি, পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও দুটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টনে ১৫ বছরমেয়াদি দুটি চুক্তি ছাড়া অন্য চুক্তিটি হলো ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিবিষয়ক। এমওইউ পাঁচটি হলো, সুন্দরবন সুরক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত ও মৎস্য খাতে সহযোগিতা, বিটিভি ও দূরদর্শন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা। মনমোহন সিংয়ের সফরে স্থলসীমানা ও বাঘ রক্ষাবিষয়ক দুটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হবে।
ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা চেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর আরোপিত নানা ধরনের অশুল্ক বাধা দূর এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবিও করেছেন তাঁরা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে। ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়লেও এখনো মোট রপ্তানির শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশের নিচে। অন্যদিকে ভারতের পণ্য আমদানি তুলনামূলক বেশি বাড়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমছে না, বরং বাড়ছেই। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ভারতে ১০ হাজার ৭৭০ মিলিয়ন টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮২ মিলিয়ন টাকার। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে এক লাখ দুই হাজার ৭১৬ মিলিয়ন টাকার পণ্য আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৬১ হাজার ৮১১ মিলিয়ন টাকার পণ্য। এ হিসাবে তিন মাসেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৯৪৬ মিলিয়ন টাকা।
মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর এই ঢাকা সফরকে বিরোধী দল স্বাগত জানিয়ে সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে। ভবিষ্যতেও বিরোধী দল এ ব্যাপারে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। মনমোহনের এই সফরের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন এক ইতিবাচক মোড় নেবে বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সুপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাব নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের আরো উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে আমরা স্বাগত জানাই।

No comments

Powered by Blogger.