শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রেহাই দিন-তোরণ-সংস্কৃতি

ভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক অধিকার হলেও কোনো নেতার জনসভা উপলক্ষে সড়ক সাজানো কিংবা তোরণ নির্মাণে অন্যদের বাধ্য করা যায় না। অথচ মঙ্গলবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহেশপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভাকে কেন্দ্র করে সেই অনৈতিক কাজই করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।


জনসভার প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তাঁর আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ শহর থেকে মহেশপুর উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক সাজায় ও ২৭টি তোরণ নির্মাণ করে।
যখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর, দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষ পিষ্ট, তখন ঘটা করে তোরণ নির্মাণ ও সড়ক সাজানো কোনোভাবেই সাধুবাদ পেতে পারে না। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে গর্হিত কাজ করেছেন তোরণ নির্মাণ ও সড়কসজ্জায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করে। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মাহবুব উল আলম হানিফের আগমন উপলক্ষে নির্মিত বেশির ভাগ তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল নেই, তাই শিক্ষকদের বেতনের পয়সা থেকে এ খরচ জোগাতে হয়েছে।
প্রশ্ন আসতে পারে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন তোরণ নির্মাণের ব্যয় বহন করল? উত্তর খুবই সোজা। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকেরা নানাভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দায়বদ্ধ। আবার তাঁরা দায়বদ্ধ ক্ষমতাসীন দলের কাছে। এভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি অশুভ চক্র গড়ে ওঠে, যাদের খপ্পর থেকে শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না।
তোরণ-সংস্কৃতির প্রতি প্রবল ঝোঁক লক্ষ করা যায় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের নেতা-নেত্রীদের খুশি করতে তোরণ নির্মাণ করা হয়ে থাকে। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে স্থানীয় সাংসদ তোরণ নির্মাণ করলে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংসদ। রাজনীতিতে শিক্ষকদের টেনে আনা ঠিক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতার কাছে যা অন্যায় ও গর্হিত ছিল, ২০১১ সালে তা ন্যায়সংগত হলো কীভাবে?

No comments

Powered by Blogger.