কুষ্টিয়ায় ছাত্রদল, সিলেটে যুবদল নেতাকে হত্যা

কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে (২৪) গত বৃহস্পতিবার রাতে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। একই রাতে সিলেটের বিশ্বনাথে যুবদলের নেতা ফুল মিয়া (২৯) খুন হয়েছেন।কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশের বিবরণ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের হাউজিং এলাকার চাঁদাগাড়া মাঠে মোস্তাফিজুরকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে ও গলা কেটে হত্যা করে চার যুবক।


খবর পেয়ে পুলিশ মোস্তাফিজুরের লাশ উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে খন্দকার মেহেরুজ্জামানকে (২০) আটক করে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাতেই পারভেজ হোসাইন (২১) ও সাজ্জাদুল বারীকে (২০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিহত মোস্তাফিজ ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি শহরের পূর্ব মজমপুর এলাকায়।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত মোস্তাফিজ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
মোস্তাফিজ হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই আসাদুর রহমান চারজনকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তারের পর পারভেজ হোসাইন গতকাল কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোস্তাফিজ আমার ছোট বোনকে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করত। রাস্তাঘাটে আমাকে সম্বন্ধী সম্বোধন করত। মাদক সেবন করে বলত, আমার বোনকে তুলে নিয়ে যাবে।’
মোস্তাফিজকে হত্যার কথা স্বীকার করে পারভেজ বলেন, ‘ও (মোস্তাফিজ) আমাদের বন্ধু না। ওর কোনো গাড়ি ছিল না। এ জন্য আমাদের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়াত। ওকে খুন করব বলে মদ খাইয়েছি। হত্যাকাণ্ডে চারজন ছিল।’ তবে নিহত মোস্তাফিজের ভাই আসাদুর রহমান দাবি করেন, ‘আমার ভাই কখনো পারভেজের বোনকে উত্ত্যক্ত করত না। কী কারণে হত্যা করা হয়েছে বুঝতে পারছি না।’
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘নিহত মোস্তাফিজ পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। হত্যায় ব্যবহূত দুটি মোটরসাইকেল ও একটি ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
বিশ্বনাথে নিহত ফুল মিয়ার পরিবার, পুলিশ ও এলাকাবাসীর বিবরণ অনুযায়ী, বাড়ির সামনে ফুল মিয়ার একটি মুদি দোকান ছিল। তিনি রাতে দোকানেই ঘুমাতেন। বাড়িতে খাবার খেয়ে বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দুইটার দিকে তিনি দোকানে যান। সকালে হলেও ফুল মিয়া দোকান না খুললে পরিবারসহ প্রতিবেশীরা গিয়ে দোকানের দরজা সামান্য খোলা পায়। ভেতরে ঢুকে তারা ফুল মিয়ার হাত ও পা বাঁধা লাশ পড়ে থাকতে দেখে। লাশের পাশে এক জোড়া জুতা পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জুতাজোড়া খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য দুদু মিয়ার বলে শনাক্ত করে।
এ ঘটনায় দুদু মিয়ার নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় হত্যা মামলা করেছেন ফুল মিয়ার চাচা আফতাব মিয়া।
বিশ্বনাথ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আহমেদ নূর-উদ্দিন জানান, নিহত ফুল মিয়া উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। খুনের ঘটনা রাজনৈতিক না ব্যক্তিগত—পুলিশকে তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন নূর-উদ্দিন।
ফুল মিয়ার চাচা আফতাব মিয়া অভিযোগ করেন, শুক্রবার (গতকাল) মামলা করার পরপরই দুদু মিয়ার ভাই সুফি মিয়া তাঁর ভাই মকদ্দছ মিয়াকে কুপিয়ে আহত করে।
এলাকাবাসীর ধারণা, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ করা গম আত্মসাৎ করার একটি ঘটনা এবং স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে দুদু মিয়ার সঙ্গে ফুল মিয়ার বিরোধ ছিল। এর জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
যোগাযোগ করলে দুদু মিয়া দাবি করেন, ফুল মিয়ার সঙ্গে তাঁর কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। পুলিশ কিছু বলছে না, অথচ ফুল মিয়ার পরিবার আমাকে খুনি বানিয়ে ফেলেছে।’
বিশ্বনাথ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) চান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুল মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। পুলিশ খুনিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.