অবৈধভাবে তোলা বালু পরিবহনে নদে বাঁধ by আরিফুল হক

রংপুর সদর উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা ঘাঘট নদের বুকে ২০০ ফুট দীর্ঘ বাঁধ দিয়েছেন। তোলা বালু পরিবহনের জন্য ওই বাঁধ দেওয়া হয়। এতে নদের প্রবাহ রুদ্ধ হওয়া ছাড়াও কয়েকটি ইঞ্জিন দিয়ে বালু তোলায় তীরবর্তী ফসলের খেত ভেঙে পড়ছে।


হাজিরহাট এলাকায় নদের ওপর নির্মিত মাটি ও বালুর বাঁধটি দিয়ে প্রতিদিন ৫০-৭০টি বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে ২০ ফুট প্রস্থের এ বাঁধের অবস্থান।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় বছর ধরে শুকনো মৌসুমে নদের এ অংশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তবে বাঁধটি দেওয়া হয় গত নভেম্বরের শুরুর দিকে। শুকনো মৌসুমে ঘাঘটের এ অংশে নৌকা চলে না।
বাঁধটি পড়েছে সদর উপজেলার উত্তম ইউনিয়নের সিট উত্তম গ্রামে। ২৩ জানুয়ারি সেখানে গিয়ে ২৫-৩০ জন শ্রমিককে বালু তোলার কাজ করতে দেখা যায়। জানা গেল, মহাসড়কের দিকে জায়গা নেই বলে বালু তুলে নদের অন্য প্রান্তে রাখা হয়। ট্রাক বাঁধ পার হয়ে সেই বালু বোঝাই করে মহাসড়কে ফিরে আসে।
আনসার আলী নামের একজন কর্মরত শ্রমিক এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে দিন-হাজিরা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতি ট্রাকে গড়ে ২০০ ঘনফুট বালু ধরে। এক ট্রাক বালু বিক্রি হয় এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিলরুবা আহমেদ গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই স্থান থেকে বালু তোলার খবর জানতে পেরে চার মাস আগে বালু উত্তোলনকারীদের নোটিশ দিই। এতে বালু তোলা কিছুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু বাঁধ দিয়ে আবারও বালু তোলা হচ্ছে—তা জানা নেই। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।’
সহকারী কমিশনার জানান, দুই-তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিট উত্তম গ্রামে নদের যে অংশটুকু পড়েছে, সেখানে ছয়টি শ্যালোইঞ্জিন বসানো হয়েছে। নদের মাঝখানে চারটি এবং ১৫০ গজ দূরে আরও দুটি ইঞ্জিন বসানো। যন্ত্রগুলো দিয়ে পাইপের সাহায্যে নদ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে গত এক বছরে নদের পাশ ঘেঁষে প্রায় দেড় একর আবাদি জমি ভেঙে গেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আরও জমি ভাঙনের মুখে।
সিট উত্তম গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছরে ২০-২৫ শতাংশ জমি ভাঙি গেইছে। আরও ৪০ শতাংশ জমি ভাঙি যায় যায় অবস্থা হইছে।’ কৃষক আতিয়ার রহমানের ৩০ শতাংশ জমি নদের ভাঙনে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘গত দেড় বছর ধরি এই জায়গা থাকি বালু তুলি নিয়া যাওয়া হয়। কিছু জমি ভাঙি গেইছে। এমন করি বালু তোলা হইলে এই এলাকার আবাদি জমি শ্যাষ হয়া যাইবে মনে হয়।’
গ্রামের মোন্নাফ আলী, শফিকুল ইসলাম, মোকসেদার রহমান, ফারুক হোসেন ও আনোয়ার হোসেন এ বালু তোলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
মোন্নাফ আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখন নদে তেমন পানি নেই। বর্ষা শুরুর আগে এ বাঁধ ভেঙে দেওয়া হবে।’ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাময়িক সুবিধার জন্য এ বাঁধ দিয়েছি।’
বালু তোলার পক্ষে যুক্তি হিসেবে তাঁরা উভয়েই নদের স্থানে অতীতে তাঁদের জমি থাকার কথা উল্লেখ করেন।
উত্তম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘এটি দেখলেও ইউনিয়ন পরিষদের কিছু করার নেই। তাই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে নদে বাঁধ দেওয়া ও বালু উত্তোলন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.