এবার শেষ ১৩৫ রানে-বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৩৫/১০-পাকিস্তান ১ম ইনিংস ১৩২/০ -(প্রথম দিনের শেষে) by মাসুদ পারভেজ

লো ঢাকা যাই, ঢাকা যাই, ঢাকা যাই! কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের স্লোগান হিসেবেই মানানসই বেশি। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে এটাকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্লোগান হিসেবে চালিয়ে দিলেও বেমানান হবে না খুব একটা। তাঁদের ব্যাটিংয়ে যে ঢাকায় যাওয়ার তাড়াই ফুটে উঠল বেশি!\ সেখানেই ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। তার আগে এখানে মানে চট্টগ্রামে এবার মন বোধহয় আর টিকছেই না।


বরাবরই সৌভাগ্যের শহর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসা শহরে এসেও তো এবার ভাগ্য ফেরেনি। কাজেই এখান থেকে দ্রুত কেটে পড়তে পারলেই হয়! জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কাল বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে এমন কত ধারণাই না কতজনে পেলেন!
কেউ কেউ আবার তা কোচ স্টুয়ার্ট ল'র সঙ্গে মিলিয়েও নিতে গেলেন। টেস্টের প্রথম দিন শেষে দ্রুত নিষ্পত্তিবিষয়ক আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি নিশ্চয়ই বলবেন না যে, 'হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। আমরা তিন দিনেই...।' এখানে শত বিরক্তি সয়েও দলের হয়ে ব্যাট ধরতে হয়। ল ধরলেনও, 'এখনই ঢাকায় যাওয়ার কথা ভাবা ঠিক হবে না।' প্রথম দিন শেষের চিত্র অবশ্য অন্য কথাই বলছে। সেখানে নিজেরা ১৩৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান কোনো উইকেট না হারিয়েই এর নাগালে, ১৩২।
দলকে এমন এক সূচনা এনে দেওয়া তৌফিক ওমর (৫৩*) ও মোহাম্মদ হাফিজ (৭৪*) আবার কাল ওপেন করতে নেমেই একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। এরাই পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম জুটি যাঁরা কিনা দেশের হয়ে সর্বোচ্চ টানা ১১ টেস্টে ওপেন করতে নামলেন! বাংলাদেশও এ দুজনার স্মৃতিতে আলাদা জায়গা নিয়েই আছে। প্রথমজন ২০০১ সালে মুলতানে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। ২০০৩ সালে পেশোয়ারে পরের জনেরও প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি বাংলাদেশের বিপক্ষে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজেও তিনটি ফিফটি করে আসা হাফিজের তুলনায় তৌফিকের আত্মবিশ্বাস আরো তুঙ্গেই থাকার কথা। এই সেদিন ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি যে সেখানেই করে এসেছেন!
আর কাল এই তৌফিককেই কিনা ফিরিয়ে দেওয়ার একাধিক সুযোগ এসেছিল। স্টুয়ার্ট ল বলছেন অন্তত চারবার। এর মধ্যে দুবার তো হতে হতেও ক্যাচ হননি এ ওপেনার। প্রথমবার ১৭ রানে মাহমুদ উল্লাহর বলে ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে লেগে সীমানার দিকে যায়। পরেরবার ৪৮ রানে সাকিব আল হাসানকে তুলে মেরে মিডঅনে অল্পের জন্য শাহাদাত হোসেনের হাতে ধরা পড়েননি। আসলে দিন খারাপ গেলে বোধহয় এমনই হয়। যখন হয় না তখন কিছুই হয় না! কাল যেমন ব্যাটসম্যানদের একদমই হলো না। কখনো কখনো আক্রমণই সেরা রক্ষণ কৌশল হয়ে যায়। কিন্তু গতকালের ব্যাটিং দেখে স্টুয়ার্ট ল'র বিশ্লেষণ_তাঁর শিষ্যরা না করতে পেরেছেন রক্ষণ, না করতে পেরেছেন আক্রমণ। সোজা বাংলায় কোচের কথার এ রকম অর্থই দাঁড়ায় যে ব্যাটসম্যানরা কিছুই করতে পারেননি।
অথচ কিছু করার দুয়ার খোলাই ছিল। সকালে উইকেট দেখেই বাংলাদেশ শিবির বুঝে গিয়েছিল যে এটা ব্যাটিংসহায়কই হবে। তাই টস জিতে মিসবাহ-উল হক উল্টো ফিল্ডিং নেওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। এ সিরিজের ধারার বিপরীতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে ভালো কিছু করে ফেললে হয়তো দিনের শেষে এ জন্য সমালোচিতও হতে হতো পাকিস্তান অধিনায়ককে। তবে সেটা পরের কথা, দিনের শুরুতে মিসবাহর সিদ্ধান্তকে আশীর্বাদই ভাবছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ দলের ব্যাটসম্যানরা যে আশীর্বাদকে অভিশাপ বানাতে জানেন! কোচ তাই দেখলেন পাকিস্তান যত না উইকেট নিচ্ছে, তার চেয়ে বেশি তাদের দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থাও তাই কাল সেই আমিরের মতো হয়ে গেল যিনি অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার পর দিনের শেষে দেখেন তাঁর নিজের জন্য আর কিছুই নেই!
থাকলও না। তামিম ইকবাল ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে দুবার হাফিজের শিকার হওয়ায় এবার টেস্টেও এ অফস্পিনারকে দিয়েই বোলিং ওপেন করালেন মিসবাহ। পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে স্পিনার দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরুর ঘটনা এই প্রথম। তামিম তাঁর বলে লংঅফ দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পর হাফিজকে সরিয়ে পেসার আইজাজ চিমাকে আক্রমণে আনলেন মিসবাহ এবং প্রথম ওভারেই সাফল্য। বলের লাইনে না গিয়ে ড্রাইভ খেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ হওয়ায় দুঃস্বপ্নের সিরিজ আরো প্রলম্বিত হলো তামিমের। এ সিরিজে যে এখনো দুই অঙ্কেই যাওয়া হলো না! এখান থেকেই দেখা যেতে থাকল সাজঘরে ফেরার তাড়া! শাহরিয়ার নাফীস, অভিজ্ঞতার ভারে নুয়ে পড়া মোহাম্মদ আশরাফুল থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসান, কে দেখালেন না সেটা! নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকল। নিয়মিত সাফল্যে হাসতেও থাকলেন পাকিস্তানি বোলাররা। দুই পেসার চিমা (২/৩৫) ও উমর গুলের (২/৩৩) শুরুর ধাক্কার পর শিকারে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় মাতলেন অন্য দুই স্পিনারও। ছক্কা খাওয়ার পর সরিয়ে নেওয়া হাফিজের আর আসারই সুযোগ হয়নি। অফস্পিনার সাঈদ আজমল (৩/৪০) ও বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রেহমানেই (৩/৯) কাজ সারা!
তবুও দুয়েকজন ব্যতিক্রম ছিলেন বলে কাজটা আরো আগেই শেষ হয়নি। সে দুজন এ ম্যাচেই টেস্ট অভিষিক্ত নাজিমউদ্দিন (৩১) এবং ওয়ানডে সিরিজে সেঞ্চুরি দিয়ে একমাত্র প্রতিরোধের গল্প লেখা নাসির হোসেন (৪১)। রিপ্লে দেখিয়েছে গুলের বলে তৃতীয় স্লিপে নাজিমের ক্যাচটা মাটি থেকে তুলেছেন হাফিজ। খারাপ দিনে যেন অভাগার সাগর শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা! আবার একটু অন্যভাবে দেখলেও হয়। নাজিম কিংবা নাসিরও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসালে তো অত দূরও যায় না যত দূর যাওয়া গেছে। তাতে ঢাকা যাওয়ার তাড়াটা দেখা যেত আরো বেশি!

No comments

Powered by Blogger.