সবিশেষ-মনের সীমানা মানাই মঙ্গল!

স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ দুটি বিষয়ের মাধ্যমেই একজন মানুষের মানসিক উৎকর্ষ বোঝা যায়। যে মানুষের মধ্যে এ দিকটি যত বেশি প্রবল, সব স্থানে তারই তো জয়জয়কার! আর তাই মানুষ চায় নিজের মনের দিকগুলোর ক্ষমতা বাড়াতে। এ জন্য অনেক ওষুধও বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, মনের ক্ষমতার একটি সর্বোচ্চ সীমারেখা আছে। প্রকৃতি-নির্ধারিত ওই সীমাটি অতিক্রম করা ঠিক নয়।


ওষুধ বা যেকোনো উপায়ে এর ক্ষমতা বাড়ালে তা মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ওয়ারউইক ও বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস ঘেঁটে তাঁরা এ সিদ্ধান্তে পেঁৗছেছেন। তাঁরা বলছেন, মানুষ এখন যতটা বুদ্ধিমান ও স্মার্ট, এর চেয়ে আরো অনেক বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন সে অনুভব করে। এ চাহিদার কথা বিবেচনা করে বাজারে ওষুধও বিক্রি হচ্ছে ঢের। কিন্তু বিবর্তনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, সবকিছু যেভাবে এগিয়েছে, তাতে এরই মধ্যে মানুষের আরো অনেক বেশি বুদ্ধিমান ও স্মার্ট হয়ে ওঠার কথা। তবে তা হয়নি। প্রাকৃতিক কারণেই এ সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। মানুষ যদি আরো বেশি বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তির অধিকারী হতো, তবে তা বিপর্যয় ডেকে আনত। এর থেকে বাঁচতেই প্রাকৃতিকভাবে এখনকার সীমারেখায় এসে বুদ্ধির বিকাশ থেমে গেছে।
কারেন্ট ডিরেকশনস নামের সাময়িকীতে এ বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, বেশি স্মৃতিশক্তি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। যেমন- আমাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত ও বেদনাদায়ক এমন অনেক কিছুই ঘটে, যেগুলোর কথা ভুলে গিয়ে আমরা নতুন করে পথচলা শুরু করতে চাই। কিন্তু স্মৃতিশক্তি আরো বেড়ে গেলে আর তা সম্ভব হবে না। এর পরিণতি কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। আবার অনেকে চায় নিজের মনের শক্তি তথা মনোযোগের শক্তি বাড়াতে। এটিও হতে পারে বিপজ্জনক। যেমন_গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই মনোযোগ দরকার। কিন্তু তা শুধু আশপাশের অন্যান্য গাড়ি-ঘোড়ার গতিবিধি সামলে চলার জন্য। কিন্তু মানুষের মনোযোগের ক্ষমতা যদি আরো বেশি হয়, তবে সে পথ চলতে গিয়ে প্রতিটি বিষয় খেয়াল করবে। রাস্তার পাশে ঝোলানো রঙিন সাইনবোর্ড, বাতাসের প্রবাহ, আশপাশ থেকে ভেসে আসা গান ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই তার মনোযোগ আবর্তিত হবে। এর পরিণতি হতে পারে বিপজ্জনক।
গবেষকদলের সদস্য থমাস হিলস ও রালফ হার্টউইগ জানিয়েছেন, বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী এতদিনে মানুষের স্বাভাবিক উচ্চতা ৮ ফুট ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ছোট্ট একটি হৃৎপিণ্ডের পক্ষে এত দীর্ঘাকৃতির শরীরে সঠিকভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন করা সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতির নিয়মেই মানুষের স্বাভাবিক গড় উচ্চতা ৬ ফুটের নিচে। আবার মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্কের আকৃতি গর্ভের কাঠামোগত কারণেই ছোট থাকে। বড় আকারের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বেশি হয়। আর বিবর্তনের সূত্র অনুযায়ীই মায়ের গর্ভে সন্তানের মস্তিষ্কের আকার প্রতিনিয়ত বড় হতে থাকার কথা। কিন্তু এমনটিও হয়নি। কয়েক শ বছর আগে যেমনটি ছিল, আজও মোটামুটি তাই আছে। এর পেছনেও প্রকৃতির সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অবদান রয়েছে। কেননা ভ্রূণের মস্তিষ্কের আকার এর চেয়ে বড় হলে গর্ভের ভেতর এর পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান হতো না এবং গর্ভেই শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যেত।
প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের মনের বিভিন্ন ক্ষমতা যেমন_মনোযোগ, স্মৃতি ও বুদ্ধি_এগুলো প্রকৃতিই একটি সীমারেখায় বেঁধে দিয়েছে। আর তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই। কাজেই অযথা প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে এ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা না করাই মঙ্গল। যেমন যাদের বুদ্ধিমত্তার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও একেবারেই কম, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাজারে পাওয়া ওষুধগুলো কিছুটা উপকারে আসে। আর যাদের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই_শুধু আরো বেশি ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টায় যারা এসব ওষুধ খায়, তাদের ক্ষেত্রে উল্টো প্রতিক্রিয়া হয়; তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসন্ন ও বিষাদগ্রস্ত অনুভব করে, ফলে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিও তারা হারিয়ে বসে। তাই প্রকৃতিকে অস্বীকার করে কৃত্রিম উপায়ে মনের উৎকর্ষ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করাটা আসলে বোকামি ও দুর্ভাগ্য ডেকে আনা ছাড়া আর কিছু নয়। সূত্র : দ্য ডেইলি মেইল অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.