কোচের কাছেও সঠিক ব্যাখ্যা নেই by কামরুল হাসান

কটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে বসলে হারাধনের দশটি ছেলের সেই পুরনো গল্পটা মনে হতো। একটা করে উইকেট যেত আর কানের মধ্যে বাজত, রইলো বাকি নয়, আট, সাত...এ রকম। টোয়েন্টি টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজের পর চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হলো সেই সময়টাই যেন আবার ফিরে আসছে। কিংবা হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেই সময়টা এখনো পেরোতেই পারেননি, মাঝে কিছুদিন অন্য
\রকম কেটেছে কেবল! নইলে এখনো কিভাবে টেস্টের প্রথম দিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার আগেই হারাধনের দশটি ছেলে নেই? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত দিন কাটানোর পরেও ব্যাটিংয়ের এই দৈন্যদশার জন্য কিন্তু কোচ স্টুয়ার্ট ল ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না। বরং তাঁর ধারণা এটা এক ধরনের মানসিক বাধার কারণে হচ্ছে। সেই বাধাটা পেরোতে পারলেই ছন্দে ফিরবে বাংলাদেশের ব্যাটিং!
উইকেট ব্যাটিং উপযোগী ছিল এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশের কোচের। টস হেরে ব্যাটিং পাওয়ারটাকেও তাই তিনি একরকম সৌভাগ্য বলে মনে করছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় দিনশেষে সেই সৌভাগ্য বদলে গেল লজ্জায়। কোচ হিসেবে স্টুয়ার্ট ল নিজেও যে সেই লজ্জার অংশীদার সেটা তিনি স্বীকার করেছেন দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনেও, 'দুঃখজনক হচ্ছে পাকিস্তান আমাদের আউট করছে না, আমরা পাকিস্তানকে খুব সহজেই উইকেট দিয়ে এসেছি এবং এটা বারবার হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে সেই ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই।' একের পর এক এ রকম ব্যাটিং ধসে অনেক দিন পর তাই প্রশ্ন উঠছে মুশফিক অ্যান্ড কোং-এর সামর্থ্য নিয়েও। তাঁরা কি ব্যাটিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলোই ভুলে গেছেন? ল অবশ্য সে রকম কিছু বললেন না। তাঁর ধারণা সমস্যাটা পুরোটাই মানসিক, 'ব্যাটিংয়ের বেসিকে কোনো সমস্যা নেই। আমার ধারণা এটা মানসিক বাধার কারণেই হচ্ছে। আমাদের ছেলেদের প্রতিভা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বাসের ঘাটতি বা মানসিক কারণে সেটা কাজে লাগাতে পারছে না ওরা। কোনো না কোনোভাবে এ বাধাটা কাটাতে হবে। যখন রক্ষণাত্মক থেকে কিছু হচ্ছে না তখন আক্রমণ করতে হবে। এ মুহূর্তে আমরা কোনোটাই করতে পারছি না।'
বাংলাদেশ না পারলেও পাকিস্তান পারছে। টস জিতে বোলিং নিয়ে পাকিস্তানি অধিনায়ক যে জুয়া খেলেছিলেন সেটা দিনশেষে দারুণ বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণ করেছেন তাঁর বোলাররা। তাঁদেরই একজন আবদুর রেহমান জানালেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল যত অল্প রানে পারা যায় তাদের আটকে রাখা। যত অল্প সময়ে পারা যায় অল আউট করে দেওয়া।' কিন্তু সেটা যে এত অল্প সময়ে হয়ে যাবে তা বোধহয় ভাবেননি পাকিস্তানি বোলাররাও! যে উইকেটে মুশফিকুর রহিমের দল অল আউট হয়েছে ১৩৫ রানে সেখানে পাকিস্তান দিনশেষে ১৩২ কোনো উইকেট না হারিয়ে! ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যর্থ হলে বোলার আর ফিল্ডারদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু বিকেলের দিকে ফিল্ডাররাও যেন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানদের পথে হাঁটার। ক্যাচ পড়েছে, কিছুটা ঢিলেমি দেখা গেছে বোলিংয়েও। আলাদা করে বোলারদের দোষটা ধরেননি কিন্তু এ রকম ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে হলে যে বোলিং আর ফিল্ডিংটাও আরেকটু ভালো হতে হবে সেই সতর্কবার্তা কোচ দিয়ে রাখলেন প্রথম দিন শেষেই, 'আসলে বোলারদের তেমন কিছু করার ছিল না। তার পরেও তৌফিককে ওরা বেশ কয়েকবার সমস্যায় ফেলেছে। অন্তত চারবার তাঁকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছে। তবে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে হলে এই হাফ চান্সগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।'
তা তো হবেই। কিন্তু এরই মধ্যে টেস্টের ড্রাইভিং সিটে বসে যাওয়া পাকিস্তান কি আর হাফ চান্সও দেবে? আর দিলেই বাংলাদেশ সেটা কতটা নিতে পারবে? স্টুয়ার্ট ল যে শুরুতেই স্বীকার করেছেন এ মুহূর্তে তাঁদের কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না!

No comments

Powered by Blogger.