শুরুতে সবারই হয়, তারপর...

ট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধি : বাংলাদেশ তো প্রতি ম্যাচে আনকোরা সব ক্রিকেটার নিয়ে খেললে পারে! প্রতি খেলায় ১১ জনের অভিষেক!\ প্রেস বঙ্ েউড়ে বেড়ানো এমন কথাবার্তা হয়তো নেহায়েতই বলার জন্য বলা। কিংবা ব্যঙ্গ করে বলা। অথবা মনের গহিনের দুঃখ থেকে উৎসারিত এই পঙ্ক্তিমালা। আলো ঝলমলে অভিষেকের পর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা তো আর বাংলাদেশ ক্রিকেটে কম না। কাল নাজিমউদ্দিনের ব্যাটিং-বীরত্বের পর আশা-হতাশার সেই


যুগলবন্দি ফিরে এল আবার। ফিরে এল পুরনো প্রশ্নটিও_কেন দুর্দান্তভাবে পথচলা শুরুর পরও খেই হারিয়ে ফেলেন ক্রিকেটাররা? জাতীয় দলকে নিয়ত আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রাখা প্রত্যাশার চোরাবালিতেই কি একসময় হারিয়ে যান তাঁরা?
নাজিমউদ্দিন কাল অমন হাতি-ঘোড়া কিছু করেননি। রান করেছেন মোটে ৩১। কিন্তু সতীর্থদের আত্মাহুতির মিছিলের পাশে সেটিই যেন সামর্থ্যের জ্বলন্ত স্বাক্ষর। নিজের প্রয়োগ ক্ষমতার উদাহরণ। টেস্টের প্রথম সকালে ব্যাটিং করতে নামার পর নাজিমউদ্দিন সাক্ষী হলেন অভিজ্ঞ সতীর্থদের ব্যর্থতার। তামিম ইকবাল, শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান_প্রত্যেকের পায়ের তলায় যেন খড়ম! দ্রুত ড্রেসিংরুমে ফেরার তাড়া। নাজিমুদ্দিন দেখলেন তাঁর এই বিখ্যাত সব সতীর্থই আউট হয়ে গেলেন দুই অঙ্কে যাওয়ার আগে।
নিজে তবুও ছিলেন অবিচল। ২৮ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে টিকে থেকে খেলেছেন যথার্থ টেস্ট মেজাজের ইনিংস। ৭৯ বলে ৩১ রানের ইনিংসই বলছে, বল মেরেছেন অল্প, ছেড়েছেন তার চেয়ে ঢের বেশি। আউটও যে হয়েছেন, সেটি ছিল নিছক দুর্ভাগ্য। উমর গুলের বলে স্লিপে মোহাম্মদ হাফিজের ক্যাচটি হাতে জমার আগে মাটিতে পড়েছিল বলে টিভি রিপ্লের রায়। নাজিমউদ্দিনের এই টেস্টমেজাজি ইনিংসটি দারুণ মনে ধরেছে কোচ স্টুয়ার্ট ল'র, 'অভিষেকে নাজিমউদ্দিনকে দারুণ লাগল। অফস্টাম্পের বাইরের বল ছেড়েছে। তাকে ক্রিজে ওকে লেগেছেও খুব স্বচ্ছন্দ।' দিনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল দুটি পয়েন্টের একটি হিসেবে নাজিমউদ্দিনের ব্যাটিংয়ের কথা বলেছেন কোচ। অন্যটি নাসির হোসেনের নিজেকে প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যাওয়া। সব সতীর্থের ব্যর্থতাতেও যিনি উজ্জ্বল। জিম্বাবুয়েতে অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ৩৪ এবং অভিষেক ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন যিনি। সেই নাসিরে মুগ্ধ কোচ, 'সবাই ব্যর্থ হলেও ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে এমনটি খেলে ফেলছে। ব্যাটিং অর্ডারের ওপরের দিকে উঠে আসার দাবিটা ক্রমে জোরালো করছে ও। নাসির আমাদের ভবিষ্যৎ। ওর পরিচর্যা সতর্কভাবে করতে হবে।'
কিন্তু জাতীয় দলে পরিচর্যাটা কী করা হয়, সে প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। অভিষেকে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে পরে ম্রিয়মাণ হয়ে যাওয়ার উদাহরণ যে ভূরি ভূরি। আমিনুল ইসলামের ১৪৫, জাভেদ ওমরের ৬২ ও ক্যারি দ্য ব্যাটে অপরাজিত ৮৫, আশরাফুলের সেঞ্চুরি কিংবা নাঈমুর রহমানের ৬ উইকেট, মঞ্জুরুল ইসলামের অভিন্ন কীর্তি, অলক কাপালি-তাপস বৈশ্যের ঝলমলে পারফরম্যান্সের অনুপাতে কিন্তু এগোয়নি তাঁদের ক্যারিয়ার। আগের সিরিজে বাঁহাতি ইলিয়াস সানির ৭ উইকেটের পর কাল নাজিমউদ্দিনের যথার্থ টেস্ট ব্যাটিং অথবা নাসিরের এগিয়ে চলায় শঙ্কার সহাবস্থান তাই সার্বক্ষণিক।

No comments

Powered by Blogger.