ত থ্য বি চি ত্রা-হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের অলঙ্কার!

প্রকৃতির অপার বিস্ময় সামুদ্রিক প্রবাল। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে জড়বস্তু বলেই মনে হয়। তবে এটি আসলে সমুদ্রেরই এক ধরনের জীব। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সাগরের অগভীর তলদেশে যে শৈলশ্রেণী দেখা যায়, তার পেছনে আছে মূলত প্রবালের অবদান। এমন প্রাচীর গঠনকারী প্রবাল 'পাথুরে প্রবাল' নামে পরিচিত। এদের কঙ্কাল ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি, যার ওপর পাতলা জীবিত টিস্যুর আবরণ থাকে।


প্রবাল মূলত একই ধরনের অসংখ্য জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন 'পলিপস' দিয়ে তৈরি। এসব 'পলিপস' নিজেদের মধ্যে পুষ্টিকর পদার্থ আদান-প্রদানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র অঙ্গের মতো কাজ করে। পূর্ববর্তী বংশধরদের রেখে যাওয়া বহিঃকঙ্কালের ওপর নতুন পলিপসের কলোনি গড়ে ওঠে। এভাবে বংশপরম্পরায় যে অসংখ্য বহিঃকঙ্কাল তৈরি হয়, তা থেকেই প্রবাল প্রাচীর তৈরি হয়। পলিপসগুলো সাগর থেকে ক্যালসিয়াম আয়ন সংগ্রহ করে ক্যালসিয়াম কার্বনেট অধক্ষিপ্ত করে বহিঃকঙ্কাল তৈরি করে। যদিও প্রবাল প্ল্যাংকটন শিকার করতে পারে, তবু এরা পুষ্টির অধিকাংশই এক ধরনের মিথজীবী শৈবালের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রবালের গায়ে জন্মানো ওইসব শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে যে খাদ্য তৈরি করে তা থেকেই তারা শক্তি পায়। যেহেতু শৈবালের সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উৎপন্ন খাদ্যই প্রবালের শক্তির মূল উৎস, তাই অধিকাংশ প্রবাল সূর্যরশ্মির ওপর নির্ভরশীল এবং সে কারণেই প্রবাল সাগরের খুব বেশি গভীরে জন্মে না।
তাপমাত্রা পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, ডুবুরিদের কর্তৃক উত্তোলন এবং জুয়েলারি শিল্পে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ইত্যাদি কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর অর্ধেক প্রবাল প্রাচীর হারিয়ে যাবে। যুগ যুগ ধরে প্রবাল প্রাচীর ও এর দ্বীপগুলো সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে বিনোদন ও 'স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য।
তাই প্রবাল প্রাচীরকে ঘিরে সেসব এলাকায় বিকশিত হয়েছে পর্যটন শিল্প। অস্ট্রেলিয়ার 'গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ' পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ এবং বিস্তৃত প্রবাল প্রাচীর। আর বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপের নাম 'সেন্ট মার্টিন'।

No comments

Powered by Blogger.