পবিত্র কোরআনের আলো-সত্যের পথে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা

৫৮. ক্বুল ইয়া-আইয়্যুহা ন্না-ছু ইন্নী রাসূলুল্লা-হি ইলাইকুম জামিআ'নি ল্লাযী লাহূ মুলকু চ্ছামা-ওয়াতি ওয়ালআরদ্ব; লা-ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া ইউহ্ঈ ওয়া ইউমিত; ফাআ-মিনু বিল্লাহি ওয়ারাসুলিহি ন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যিল্লাযী ইউমিনু বিল্লাহি ওয়াকালিমা-তিহী ওয়াত্তাবিউহু লাআ'ল্লাকুম তাহ্তাদুন। ১৫৯. ওয়ামিন্ ক্বাওমি মূসা-উম্মাতু ইনয়্যাহ্দুনা বিলহাক্কি ওয়াবিহী ইয়াদিলুন। ১৬০. ওয়াক্বাত্ত্বা'না-হুমু ছ্নাতাই আ'শ্রাতা আছ্বা-ত্বান উমামা; ওয়াআওহাইনা-ইলা-মূসা-ইযি


ছ্তাছ্ক্বাহু ক্বাওমুহু আনি দ্ব্রিব্ বিআ'সা-কাল্হাজার; ফাম্মাজাছাত্ মিনহু ছ্নাতা-আ'শ্রাতা আই'না; ক্বাদ আ'লিমা কুল্লু উনাছিম্ মাশরাবাহুম; ওয়াযাল্লাল্না-আ'লাইহিমুল্গামা-মা ওয়াআনযালনা-আ'লাইহিমু ল্মান্না ওয়াচ্ছালওয়া; কুলু মিন ত্বায়্যিবাতি মা-রাজাক্বনা-কুম; ওয়ামা-যালামুনা-ওয়ালাকিন্ কানু আনফুছাহুম ইয়ায্লিমুন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৫৮-১৬০]

অনুবাদ : ১৫৮. আপনি বলুন, হে মানবজাতি, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। যার আয়ত্তে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনিই জীবন ও মৃত্যুর অধিকারী। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর সেই রাসুলের প্রতি ইমান আনো, যিনি উম্মি নবী এবং যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে বিশ্বাস রাখেন। তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, যাতে তোমরা হেদায়েত লাভ করো। ১৫৯. মুসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একটি দলও আছে, যারা মানুষকে সত্যের পথ দেখায় এবং সে অনুসারে ন্যায়নিষ্ঠতা অনুসরণ করে। ১৬০. আমি তাদের (বনি ইসরাইলকে) ১২টি গোত্রে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্যে ভাগ করে দিয়েছিলাম। মুসার কওম যখন পানি চাইল, তখন আমি তাঁর কাছে ওহি পাঠালাম, তোমার লাঠি দিয়ে অমুক পাথরে আঘাত করো। সুতরাং সে পাথরের নিচ থেকে ১২টি প্রস্রবণ উৎসারিত হলো। প্রত্যেক গোত্র নিজেদের পানীয় জল সংগ্রহের স্থান চিহ্নিত করে নিল। আমি তাদের মেঘের ছায়া দিলাম এবং মান্না ও সালওয়া নামক খাবারের ব্যবস্থা করলাম। আমি তোমাদের যে পবিত্র রিজিক দান করেছি তা খাও। (এর পরও তারা অবাধ্য ও পাপাচারী হয়েছে)। আসলে তারা আমার ওপর অত্যাচার করেনি, বরং নিজেদের ওপরই অত্যাচার করেছে।

ব্যাখ্যা : ১৫৮ নম্বর আয়াতটিতে বনি ইসরাইলের প্রসঙ্গ ধরেই মানবজাতির প্রতি একটি আহ্বান জানানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। আগেই বলা হয়েছিল, নবী মুসা (আ.)-এর দোয়া কবুল করার সময় তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বনি ইসরাইলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তি লাভ করতে হলে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ইমান আনতে হবে। সেই প্রসঙ্গে রাসুল (সা.)-কে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তিনি যেন বনি ইসরাইলসহ বিশ্বের সব মানুষকে তাঁর অনুসরণ করার আহ্বান জানান। এখানেও আল্লাহ তায়ালা শেষ নবীর কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। ১৫৯ নম্বর আয়াতটিও বনি ইসরাইল সম্প্রদায় প্রসঙ্গে। বনি ইসরাইলের নানা রকম দুষ্কর্ম ও অবাধ্যতার অনেক কাহিনী কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। এর ফলে কারো মনে এমন ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যে বনি ইসরাইলের সব মানুষই খুব খারাপ এবং জাতি হিসেবেই তারা নিকৃষ্ট ও পাপাচারী। কিন্তু এ রকম ধারণার জন্ম হলেও তা হবে একটা ভুল ধারণা। বনি ইসরাইলের সব লোকই এ রকম নয়; বরং তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা সত্যকে স্বীকার করে সত্যের অনুসরণ করে এবং মানুষকে সত্যের পথ দেখায়। বনি ইসরাইলের সেসব লোক মহানবী (সা.)-এর আগে সত্য ও দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, তারা যেমন এর অন্তর্ভুক্ত, তেমনি সেসব বনি ইসরাইল ও যারা মহানবী (সা.)-এর সময়ে বা এর পরবর্তী সময়ে তাঁর ওপর ইমান এনেছে, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত।
১৫৯ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে দেওয়ার পর ১৬০ নম্বর আয়াতে আবার হজরত মুসা (আ.)-এর সমকালীন বনি ইসরাইলের যে ঘটনাবলি বর্ণিত হচ্ছিল, সেখানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১৬০ থেকে ১৬২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত যেসব ঘটনার উল্লেখ বা পুনরুল্লেখ করা হয়েছে তা সুরা বাকারায় (২:৫৭-৬১) আরো বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। মিসর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নবী মুসা (আ.)-এর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলরা যায় লোহিত সাগরের পূর্ব তীরে, যারা ছন্নছাড়া অবস্থায় ঘুরে বেড়িয়েছিল, তখনকার ঘটনাবলি এ আয়াতগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। জানা যায়, তাদের আদি আবাসভূমি ফিলিস্তিন তখন অন্য জাতির দখলে চলে গিয়েছিল। বনি ইসরাইল আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তা পুনরুদ্ধার করতে সাময়িকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.