গণিতবিদদের গণিতবিদ by আসিফ

দেড়শ' বছরের ইতিহাসে সেরা কয়েক গণিতজ্ঞের একজন হলেন ডেভিড হিলবার্ট। তিনি বলেছিলেন, তাকে যদি এক হাজার বছর ধরে ঘুমানোর পর জাগানো হয় তাহলে তার প্রথম প্রশ্ন হবে 'রিম্যানীয় হাইপোথিসিসটি কি প্রমাণ করা হয়েছে?' সেই জেটা ফাংশনের কার্যকর সমাধান বের করেছিলেন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত রামানুজন। তিনি মডুলার সমীকরণ সমাধান করতে পারতেন, অচিন্তনীয় সূক্ষ্মভাবে কমপেল্গক্স গুণন করতে পারতেন, চলমান ভগ্নাংশে


যার জ্ঞান পৃথিবীর যে কোনো গণিতবিদদের চিন্তার বাইরে এবং সংখ্যাতত্ত্বের অসংখ্য বিখ্যাত সমস্যার সমাধান করেছেন। অথচ তিনি ডাবল পিরিয়ডিক ফাংশন, কচির উপপাদ্যের নামও শুনেননি এবং কমপেল্গক্স ভেরিয়েবলের মতো সাধারণ ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। হার্ডির ভাষায় তার যে পরিমাণ গভীরতা ঠিক সেই পরিমাণ সীমাবদ্ধতা। গাণিতিক সমাধানে তার জ্ঞান ছিল খুবই অস্পষ্ট ও অদ্ভুত রকমের গোলমেলে, সাধারণ রীতিনীতির সঙ্গে খাপ খায় না। মাত্র ২৫ বছর বয়সের মধ্যে ডাইভারজেন্স সিরিজের তত্ত্বের ওপর নতুন কাজ করেন।
যক্ষ্মা রোগে ভুগে ভুগে তিনি মারা গিয়েছেন মাত্র ৩২ বছর বয়সে। সাধারণ মানুষ রামানুজনের নাম জানে না ঠিকই। কিন্তু পৃথিবীর প্রতিটি গণিতবিদ রামানুজনের নাম শুনে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। তাকে বলা হয় গণিতবিদদের গণিতবিদ। তার জন্মের সময় প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে তার মা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পিত্রালয় এরোড চলে যান। এরোড হলো কাবেরি ও শাখা ভবানী নদীর তীরে অবস্থিত আরেক জনপদ। সেখানেই ১৮৮৭ সালের ২২ ডিসেম্বরের গোধূলিবেলায় রামানুজনের জন্ম। তার পুরো নাম শ্রীনিবাসন রামানুজন আয়েংগার। তার বাবার নাম শ্রীনিবাস ও মায়ের নাম কমলাতমাল। তার বাবা গ্রামের এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর দোকানে কর্মচারী ছিলেন এবং তার মা মন্দিরে ধর্মীয় সঙ্গীত গেয়ে পয়সা উপার্জন করতেন। তাদের উভয়েরই মিলিত আয় ছিল ২০ রুপির মতো- এ থেকেই বোঝা যায় তারা কত দরিদ্র ছিলেন। ৭-৮ বছর বয়সে কুম্বকোনাম হাইস্কুলে ভর্তি হন। কতগুলো বিশেষ বিষয় তিনি সে সময় ভাবতে পছন্দ করতেন- পৃথিবীর প্রথম মানুষ কে? মেঘগুলোর মধ্যে দূরত্ব কত? তিনি ১২-১৩ বছর বয়সে কিউবিক সমীকরণের সমাধান শিখে ফেলেন। রামানুজনের মতো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অশিক্ষিত লোক যা করেছেন তাতে পৃথিবী বিস্মিত হয়ে আছে। তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা না গেলে কী করতেন তা শুধু কল্পনা করা যায়, কারণ কেবল তিনি আরম্ভ করেছিলেন। রামানুজন ছিলেন সেই ধরনের এক প্রতিভা যাকে দেখলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অসাধারণ গণিতবিদদের কেউ বলে ভাবতে ইচ্ছে করে। আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থ পরিবেশে কত প্রতিভার যে অকাল মৃত্যু ঘটে তা কে জানে! গণিতে তার প্রকাশনা নিয়ে ৪০০ পৃষ্ঠার গ্রন্থ রচিত হয়েছে। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিও যথাযথ বিশ্লেষণ করে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.