মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-দোষীরা শাস্তি পাক

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪০ বছর পর গণহত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ ও লুটসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিচারের গণদাবি পূরণের পথ প্রশস্ত হলো। এরপর একই ধরনের অপরাধে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও


অভিযোগ গঠন করা হবে। এভাবেই সে সময়ে ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে প্রত্যাশা। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এতদিন যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারিনি। স্বাধীন দেশে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনতাকে রাস্তায় নামতে হয়েছে এবং এই সেদিনও বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার দাবিতে জনতাকে রাস্তায় নেমে দাবি জানাতে হয়েছে। এক সময় গণআদালত বসিয়ে প্রতীকী বিচারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। অথচ বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কেউ কেউ মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। সৌভাগ্যের কথা এই যে, দীর্ঘদিন পরে হলেও এ দেশের মানুষ আন্দোলনের ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পেরেছে। এই বিচারের দাবিকে বাস্তবায়িত করার জন্য জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়যুক্ত করে ক্ষমতায় বসিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার জনতার এই অভিপ্রায়কে মূল্য দিয়ে বহু বাধাবিঘ্ন, জাতীয়-আন্তর্জাতিক, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাপ সত্ত্বেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার পথে সব ধরনের সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে। এ জন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা এর বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা শাস্তি পাক। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয়। এ জন্য বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা জরুরি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা যাতে আইনি প্রক্রিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ পায় সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত হওয়া চাই। আমরা আশা করব, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যথাযথভাবে অভিযোগ মূল্যায়নের পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করবেন। ইতিমধ্যে প্রথম অভিযুক্ত সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ৩১টির মধ্যে ২০টি অভিযোগকে মেরিট অনুযায়ী আমলে নিয়েছেন আদালত। এতেই আদালতের সতর্কতা, সুবিবেচনা ও স্বচ্ছতা প্রকাশ পায়। আমরা আশা করব, সাঈদীর মতো অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলো পর্যালোচনার ক্ষেত্রে একই স্বচ্ছতা-নীতি অনুসরণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা গণহত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ ও লুটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই তাদের বিচার সম্পন্ন করা উচিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতিকে গল্গানি মোচনের সুযোগ করে দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
 

No comments

Powered by Blogger.