এবার অন্য রকম এল ক্লাসিকো

ল ক্লাসিকো, মানে ধ্রুপদি লড়াই। শুধুই দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল দলের লড়াই নয় এটা_লড়াইটা ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক এমনকি খানিকটা আদর্শিকও বটে। সাম্প্রতিক সময়ে আবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা_বিশ্বের সেরা দুই ফুটবলারের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগার সবচেয়ে সফল দুটি দলের প্রতি বছর অন্তত দুটি লড়াই হওয়া নিশ্চিত। তার মধ্যে প্রথমটির কিন্তু আরো একটি রহস্যময় চরিত্র দাঁড়িয়েছে! প্রতি বছর
ক্রিসমাসের ছুটির আগে আগে লিগের প্রথম পর্বের লড়াইটা যারা জেতে, শেষ পর্যন্ত তারাই জেতে লা লিগার শিরোপা। গত সাত মৌসুম ধরেই এমনটা হয়ে আসছে। সাত মৌসুমে পাঁচবার এ লড়াই জিতেছে বার্সেলোনা, পাঁচবারই শেষ পর্যন্ত লা লিগা জিতেছে তারা। রিয়াল জিতেছে মোটে দুবার, সেই দুবার, ২০০৬-০৭ আর ২০০৭-০৮ মৌসুমে তারাই জিতেছে লা লিগার শিরোপা।
কিন্তু সেই ২০০৮ সালের মে মাসের পর থেকে যে আর লা লিগায় কখনো কাতালানদের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পায়নি রিয়াল! এই সময়ে এল ক্লাসিকোকে একতরফা লড়াইয়ে পরিণত করেছে পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনা। সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ১১ বারের দেখায় একটা মাত্র হার, তাও আবার অতিরিক্ত সময়ে_বিপরীতে সাতটি জয় বলছে ইদানীং এল ক্লাসিকো মানেই ফেভারিট বার্সেলোনা। তাদের দলে যে আছে লিওনেল মেসি নামের এক জাদুকর, রিয়ালের বিপক্ষে বার্সেলোনার সর্বশেষ ৯টি গোলের সাতটিই এসেছে তাঁর পা থেকে, রিয়ালের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ছয়বার খেলতে নেমে কখনোই গোল না করে ফেরেননি তিনি! তুলনায় যাঁর সঙ্গে তাঁর লড়াই, সেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আবার বার্সেলোনার বিপক্ষে একেবারেই ম্লান_পুরো ক্যারিয়ারে খেলা সব দলের হয়েই করেছেন মোটে তিনটি গোল, রিয়ালের মাঠে মাত্র একটি!
এসব পরিসংখ্যানের কথা মাথায় রাখলে আজ রাতের লড়াইটাতে চোখ বন্ধ করেই ফেভারিট হিসেবে মানতে হয় বার্সেলোনাকে। কিন্তু এবারের এল ক্লাসিকোটা যে একেবারেই অন্য রকম! বিশেষ করে বার্সেলোনা সমর্থকদের জন্য তো বটেই। অনেক অনেক দিন পর এই প্রথম বার্সেলোনা এল ক্লাসিকোয় খেলতে নামছে প্রতিপক্ষের চেয়ে একটু হলেও কম আত্মবিশ্বাস নিয়ে! এ মুহূর্তে লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় তারা রিয়ালের চেয়ে তিন পয়েন্ট পেছনে, তাও আবার একটি ম্যাচ বেশি খেলে। যার অর্থ, আজকের ম্যাচটা হারলে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে ফিরে এসে তারা দেখবে রিয়াল এগিয়ে গেছে ৯ পয়েন্ট! এ ম্যাচটা আবার হবে রিয়ালের মাঠে, আর এ মৌসুমে নিজেদের মাঠ ন্যু ক্যাম্পের বাইরে ছয়টি ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জিতেছে তারা।
অন্যদিকে রিয়াল আছে স্মরণকালের সেরা ফর্মে। সব টুর্নামেন্ট মিলে গত ১৫টি ম্যাচে টানা জয় পেয়ে তারা ছুঁয়েছে ৪১ বছরের পুরনো ক্লাব রেকর্ড। সেই সেপ্টেম্বরে রেসিং সান্তানদারের বিপক্ষে ড্র করার পর আর পয়েন্ট হারাতে হয়নি তাদের, রোনালদোর সঙ্গে গনজালো হিগুয়াইন আর করিম বেনজেমাও দারুণ ফর্মে থাকায় লিগে এ পর্যন্ত প্রতি ম্যাচে ৩.৫ গড়ে করেছে ৪৯টি গোল। গার্দিওলাও মানছেন, 'রিয়াল সব সময়ই শক্তিশালী দল, আমি যখন খেলোয়াড় ছিলাম তখন যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে। আর ইদানীং তারা দারুণ ফর্মেও আছে। তবে আমরা জয়ের চেষ্টাই করব, যেমন আমরা সব সময় করি।'
এ মৌসুমে রিয়ালের ৪৯ গোলের ৩৬টিই এসেছে তিন স্ট্রাইকার_রোনালদো, বেনজেমা আর হিগুয়াইনের পা থেকে। রিয়ালের কোচ হোসে মরিনহো অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন আজ তিনজনকেই একসঙ্গে খেলাবেন না তিনি, রোনালদোর সঙ্গে জুটি বাঁধবেন বেনজেমা-হিগুয়াইনের মধ্যে একজন, আক্রমণে তাঁদের সঙ্গী হবেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। আর এ ম্যাচকে ঘিরে যতই উত্তেজনা ছড়াক মিডিয়ায়, আশ্চর্য নির্লিপ্ত এ পর্তুগিজ, 'এটা আর দশটা ম্যাচের মতোই একটি ম্যাচ। আপনাদের কাছে হয়তো বিশেষ কিছু, কিন্তু আমাদের কাছে জীবনের পথচলারই অংশ। এত দিন পর্যন্ত কোথায় কি ঘটেছে তাতে কিছুই যায়-আসে না, আসল ব্যাপার হলো ওই ৯০ মিনিটে কি ঘটছে।'
এল ক্লাসিকোর উত্তেজনার সঙ্গে যায় না এ মন্তব্য, যায় না হয়তো মরিনহোর চরিত্রের সঙ্গেও। বিশেষ করে সর্বশেষ এল ক্লাসিকোর স্মৃতি মনে করলে তো বটেই। বার্সেলোনার বিরুদ্ধে বিষোদগার, রেফারিদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ছাড়িয়ে গত এপ্রিলের স্প্যানিশ সুপার কাপ দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটির শেষে যে বার্সেলোনার সহকারী কোচ টিটো ভিলানোভাকে আক্রমণই করে বসেছিলেন রিয়ালের কোচ। তবে তাঁর ওই মন্তব্যই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, এবারের এল ক্লাসিকোর আবহটা আসলেই অন্য রকম! এএফপি, রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.