মানবাধিকার-সামাজিক জাগরণ, সঙ্গে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা

ণতন্ত্র যেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতির ভিত নয়, রাষ্ট্রের ভেতরে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতা সীমিত, সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি বোধগম্য কারণেই সুখকর নয়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বিরতিহীনভাবে কার্যকর থাকতে পারেনি বলে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশিত বিকাশ ঘটেনি। নাগরিক প্রতিষ্ঠান ও তৎপরতাও এখানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে বিকাশমান অবস্থায় আছে।


নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন স্থিতিশীল হয়েছে, এমন বলা যাবে না। আর্থ-সামাজিক সূচকে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের মতো বিস্তৃত ও জটিল একটি বিষয় নিয়ে সার্বিক পর্যবেক্ষণ হাজির করা কঠিন। এ কঠিন কাজটি করতেই বৃহস্পতিবার একটি গোলটেবিল আলোচনায় বসেছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ইউএসএইড, সমকাল ও প্ল্যানের আয়োজনে এ গোলটেবিল বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ কথা সত্য, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সুখকর নয়। গৃহকোণ থেকে রাষ্ট্রীয় আওতা পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়ে আসছে। অবস্থাভেদে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমবেশি হলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখানে সবসময়ই উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ আছে, মানবাধিকার কমিশন গঠন এর একটি। মানবাধিকার কমিশন কাজ শুরু করলেও সবসময় এ কমিশনের কথা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেক সময়ই গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজের মতো একটি সচেতন কণ্ঠস্বর হিসেবে বক্তব্য প্রকাশের মধ্যেই কমিশনের তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকছে। এটিও কম অর্জন নয়। সবাই স্বীকার করেন, সমাজে মানবাধিকার নিয়ে যত খোলামেলা কথাবার্তা হবে সরকারগুলোও তত দায়িত্বশীল হবে। এ জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিক সমাজের তৎপরতাও জরুরি। সবচেয়ে জরুরি মানবাধিকার বাস্তবায়নের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক তৎপরতার সঙ্গে তরুণদের অংশগ্রহণ। রাষ্ট্রের নানা বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, এটি যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য, গৃহকোণের অনেক ঘটনা সচেতনতার অভাব ও আইনকানুন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ঘটে। ফলে সমাজে সার্বিক সচেতনতা কার্যক্রম দরকার। পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক তৎপরতা, আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত রাখা জরুরি। এ জন্য নিরন্তর কথা বলতে হবে যেমন, তেমনি নানা পর্যায় থেকে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। মুখে গণতন্ত্রের কথা না বলে সরকারগুলো যেন গণতান্ত্রিক রীতির প্রতিই আস্থাশীল হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকারের গালভরা বুলি না আওড়ে সরকারগুলো যাতে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা আমলে নিয়ে মানবাধিকার রক্ষায় তৎপর হয় সেটি সর্বাগ্রে কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.